Home বিনোদন গল্প উপন্যাস কে? আকাশ মাহমুদ রচিত গল্প বই।

কে? আকাশ মাহমুদ রচিত গল্প বই।

0

কে? আকাশ মাহমুদ রচিত গল্প,
প্রকাশনী:কলি প্রকাশনী,
পৃষ্টা:৯৪ পৃষ্টা,
মুদ্রণ মূল্য:১৩৫ টাকা।

ভূমিকা:
আমাদের অাশে পাশে যে চরিত্রের লোকগুলো রয়েছে তাদের গল্পগুলো নিয়ে রচিত “কে” বইটি।এতে রয়েছে মোট ১০ টি গল্প।প্রত্যেকটি গল্পে রয়েছে অালাদা বৈচিত্র্যময়তা।মানুষের স্বপ্ন,অাশা,অাকাঙ্খা,সুখ-দুঃখের পালাবদল।১ম গল্পের নাম থেকেই বইয়ের নামকরণ করা হয়েছে।

মূল গল্পের সারাংশ:
১।কে:সেকান্দর সাহেব অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক।চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলেন।ডাক্তার বললেন তার মাথায় মারাত্মক টিউমার হয়েছে।সঙ্গে লিভারটাও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।বাড়িতে গিয়ে ঘুম ভেঙ্গে দেখলেন খাটের নিচে অাবিষ্কার করা সেই বৃদ্ধ লোকটাকে।সেই লোকটিই তার মাথার ভেতর থেকে কিছু একটা ছিঁড়ে বাহিরে অানলেন।সেকান্দর সাহেব দেখলেন বৃদ্ধের হাতে একটা রক্তের দলা।একটা ছোটো মাংসপিণ্ড।সেকান্দর সাহেবের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে অাসছে।তিনি চোখ বন্ধ করে অাছেন।চোখ বন্ধ অবস্থায় তিনি বুঝতে পারছেন মানুষটা তার বুকের ভেতর কিছু একটা করছেন।মনে হচ্ছে তার বুকের ভেতর সবকিছু ছিঁড়ে তছনছ হয়ে যাচ্ছে।

সেকান্দর সাহেব তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।তিনি কথা বলতে পারছেন না।তার খুব ঘুম পাচ্ছে।মাথার ভেতরের যন্ত্রণা হঠাৎ ঝাঁকি দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।তিনি ভেবে পাচ্ছেন না তিনি কি স্বপ্ন দেখছিলেন নাকি সত্যি কেউ একজন অাসছিল তার কাছে?

২।না মানুষের গপ্পো:স্টেশন প্রিয় মানুষ জহির স্টেশনে কাজ করে কোন রকমে সংসার চালায়।বড়ই অভাবের সংসার তার।অভাবের তাড়নায় তার বউ পতিতার কাজ করে।কিন্তু তারাও স্বপ্ন দেখে।একদিন দূরে কোন অচেনা গ্রামে চলে যাবে তারা।যেখানে কেউ তাদের চিনবে না।না মানুষ বলে মুখ ফিরিয়া নেবে না।একদিন টাকা দিয়ে জমি কিনবে।একটি টিনের ঘর বানাবে।সে ঘরে অভাব থাকবে না।

৩।খেল:একটা লাশকে ঘিরে এই গল্প।গোসল করা থেকে শুরু করে দাফন কাফন সব কিছু এই গল্পে বর্ণিত রয়েছে।লাশটি যেনো সব কিছু দেখছে,চিৎকার করে কিছু বলতে চাইছে।কিন্তু লাশটির চিৎকার লাশটি ছাড়া কেউ শুনতে পাচ্ছে না।

৪।কুসুম কাহিনী:বৃষ্টিতে অভাবী মানুষের দুর্গতির চিত্র ফুটে উঠেছে এই গল্পে।ছোট বাচ্চা পুষ্পকে নিয়ে কুসুমের সংসার।তার স্বামী থেকেও নেই।তিন মাস হয়ে গেলো খবর নেই।পুষ্পকে ঘরে রেখে কুসুম গলির ওপারে কাদের মিয়ার দোকানে যায়।কাদের তাকে তার সাথে সংসার করার লোভ দেখায়।দোকান থেকে এসে কুসুম চৌকির নিচে পানিতে মাছ ভেবে নিজের বাচ্চার দেহ দা দিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে।

৫।বিষলতা:সন্তানের প্রতি পিতার মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে এই গল্পে।গফুরের ছেলের পায়ে বিষ লাগছে।শহরের ডাক্তার দেখবার টাকা নেই গফুরের।শেষ পর্যন্ত নুরু ওঝা গফুরকে মুন্সির জঙ্গল ভিটায় নীল রঙা বিষলতা অানতে বলে।চারিদিকে ঝোপঝাড়ে ঢাকা।গফুর এই ঝোপে সেই ঝোপে খুঁজেছে।না কোথাও দেখা যাচ্ছে না নীল রঙের লতার।গফুর চিৎকার করে ওঠে,’অাল্লা রে,অামার ছাওয়ালডারে বাঁচাইয়া দে অাল্লা।অামারে বিষলতা দেখায়ে দে অাল্লা।’

অন্ধকার হয়ে অাসছে চারদিকে।গফুর কপালের ঘাম মুছে ক্লান্ত হাতে ঝোঁপের ভেতরে হাতড়াতে থাকে।সূর্য ঢুবি ঢুবি করছে।গফুর হাতড়াতে থাকে।যেভাবেই হোক সূর্য ঢোবার অাগে তাঁকে খুঁজে পেতেই হবে বিষলতাটিকে।

৬।কূপ:ইট ভাটায় শুধু মাটি পোড়ানো হয় না,জীবিত ও মৃত মানুষদেরও পোড়ানে হয়।কবির সাহেবদের মতো মানুষরা মনুদের দিয়ে এই সব অাকাম কুকাম করিয়ে থাকে।নিজের ঘরের খাওয়া রেখে মনুরা কবির সাহেবদের অন্যায় অাদেশ পালনে বাধ্য।

৭।জাবেদ অালীর সংসার:জাবেদ অালীর মনে শূণ্যতা কাজ করে।এই শূণ্যতা ছেলেকে নতুন প্যান্ট কিনে না দেওয়ার শূণ্যতা;এই শূণ্যতা বউকে নতুন শাড়ি কিনে না দেওয়ার শূণ্যতা।এই শূণ্যতার মাঝেও জাবেদ অালী বউয়ের জন্য বকুল ফুলের মালা অানতে ভুলে না।

৮।ঘাতক:জামান মতিনের দোকানে কাজ করে।মতিন মিয়ার শ্যালিকা লতিফাকে তার পছন্দ।মতিন মিয়ার স্ত্রীর লাশ পাওয়া যায় ঘরের ডাবের সাথে।একসময় এই মতিন জামানকে বুকের উপর বসে মারতে চায়।জামান বুকের উপরের মানুষটাকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে,’কি করছি অামি?কিসের জন্যি?’

‘লতিফার জন্যি।লতিফারে পাওয়ার জন্যি কি করি নাই অামি?হাজেরা গলায় দড়ি দিয়া মরছে।কিন্তু ও নিজে মরে নাই।অামার এই হাত দিয়া ওরে মাইরে ঘরের ডাবের লগে নিয়া ঝুলায়ে সবাইরে কইছি হাজেরা নিজের গলায় নিজে দড়ি দিয়া মরছে।’

‘ভাবিরে অাপনে?’
‘হ!’
‘অামি মারছি।নিজের হাতে মারছি।লতিফারে যে অামার থেইকা কাইরা নিতে চাইবে অামি তাঁরে এই দুনিয়ায় থাইকতে দিবো না।’

জামান অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে।কিছু বলতে গিয়ে কিছু বলতে পারে না।হঠাৎ অাকাশের চাঁদকে অনেক বড় মনে হয় ওর কাছে।চাঁদকে লতিফার মুখ মনে হয়।এক সময় লতিফার মুখ ঝাঁপসা হতে থাকে।চারপাশেন অন্ধকার অারো গাঢ় হতে থাকে।

জামান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ঘাতক ময়নার দিকে।

৯।দোলনা:নয় মাসের বাচ্চাকে হারিয়ে দিশেহারা মা।সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।কিন্তু সেই মা এখনও ঘুমাই নি।সাত তলার ছাঁদ ঘরে একটি দোলনা দুলতে থাকে।একটি মা সেই দোলনাই দোল দেই অার গুণগুণ করে গান গায়।

খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্গি এলো দেশে!

১০।হানাদারের শাস্তি:যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে।সব মিলিটারি দেশে ফিরে গেলেও জালাল মিয়া যায় নি।গ্রামের মানুষ তাকে শাস্তি দিতে চাই,দিতে চাই মৃত্যুদণ্ড।
কিন্তু একসময় একটা পুরাতন ডায়েরীর মাধ্যমে মোবারক বুঝতে পারে সবাই একটা ভুল করতে যাচ্ছে।এতো বড়ো ভুল হতে দেয়া যায় না।পৃথিবীতে ঘৃণা করার অপরাধের চেয়ে ভালোবাসার অপরাধ কে বেশি অপরাধ ভাবা হয়।

প্রতিক্রিয়া:ভালোই ছিলো গল্পগুলো।অামাদের সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে গল্পগুলো।দশটি গল্পে দশ রকম ফ্ল্যাভার পেয়েছি।মনের স্বাদ পুরোপুরি মিটে গেছে।গল্পের বৈচিত্র্যময়তাতা ছিলো চোখে পড়ার মতো।

অামার ব্যক্তিগত রেটিং ৯.৫/১০।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!
Exit mobile version