Home পড়া-শুনা অনার্স পানি দূষণ কি এবং পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়।

পানি দূষণ কি এবং পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়।

0
পানি দূষণ কি এবং পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়।

পানিই জীবন। পৃথিবী নামক গ্রহে পানির প্রাচুর্যতাই জীবনের অস্তিত্বকে বাস্তবে রূপদান করেছে এবং প্রাণের সমুজ্জল উপস্থিতি তারই বহিঃপ্রকাশ। এ গ্রহের প্রায় ৭১ ভাগ পানি যার বেশির ভাগই লবণাক্ত। একদিকে বিশ্বব্যাপী অল্প পরিমাণ সুপেয় এবং সহজলভ্য পানি, অন্যদিকে এ সীমিত পানির দূষণ মানবকুলকে অস্তিত্বহীনতার মুখোমুখি করে তুলতে পারে। তাই পানি দূষণ মানবসভ্যতার জন্য এক অভিশাপে পরিণত হচ্ছে।

→ পানি দূষণ : 

পানির সাথে কোনো অবাঞ্চিত পদার্থ মিশে যাওয়ার ফলে যদি পানির ভৌত রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয় এবং তার ফলে জলজ উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তবে পানির সেই খারাপ অবস্থাকে পানি দূষণ বলে । অন্যভাবে বলা যায়, পানি দূষণ হলো পানির প্রকৃত গুণাগুণ নষ্ট করে তাকে অন্যান্য প্রাণী ও জীবের জন্য ক্ষতিকারক বস্তুতে পরিণত করে। পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক ও ভৌত গুণাগুণ থাকে। বিভিন্ন কারণে ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থিত পানির এ গুণাগুণকে পরিবর্তন করে প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকারক অবস্থার সৃষ্টি হওয়া কিংবা কিছু নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহারের জন্য পানির অপরিমিত ও অসহনীয় অবস্থার ফলই পানি দূষণ সুতরাং পানি দূষণ হলো পানির রাসায়নিক, জৈবিক অথবা ভৌত গুণাগুণ পরিবর্তন যা সজীব বস্তুর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং ফলশ্রুতিতে পানিকে আকাঙ্ক্ষিত এবং ব্যবহারযোগ্য কার্য থেকে একটি অব্যবহারযোগ্য এবং ক্ষতিকারক পদার্থে পরিণত করে।

→ পানি দূষণের সহায়ক শর্তাবলি : 

পানি দূষণ এবং এর মাত্রাগত পরিবর্তনের জন্য কিছু শর্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন- 

(i) দূষকের প্রকৃতি এবং ঘনত্ব কিংবা পরিমাণ বেশি হলে পানি বেশি দূষিত হয়।

(ii) পানি স্থিরাবস্থায় থাকলে দূষিত হতে পারে কিংবা দূষণের মাত্রা বাড়তে পারে।

(iii) পানির পরিমাণ কম হলে দূষিত কিংবা বেশি দূষিত হতে পারে। বিপরীতভাবেও সত্য।

(iv) এছাড়া আরও কিছু শর্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

(ক) পানির তাপমাত্রা ।

(খ) দূষকের অর্ধক্ষেপণ মাত্রা ।

(গ) পানির গভীরতা ইত্যাদি।

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, পানি দূষণ হলো পানির সেই অবস্থা যা প্রাণীকুল এবং উদ্ভিদকুল উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে পানি দূষিত হয়। যা পরিবেশ ও জীব জগৎ উভয়ের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই আমাদের যেকোনোভাবেই হোক এই দূষণ রোধ করতে হবে।

পানি দূষণের কারণসমূহ :

জীবের উপর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টিকারী পানির যেকোনো ভৌত রাসায়নিক বা জৈবনিক পরিবর্তনকে পানি দূষণ বলে। সাধারণত মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্মকাণ্ডের ফলে পানির বিভিন্ন উপাদানের বা গুণাগুণের পরিবর্তনকে পানি দূষণ বলা হয়। অথবা, পানিতে বিভিন্ন দূষক পদার্থ মিশে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হলে তাকে পানি দূষণ বলে ।

পানি দূষণের কারণ :

(i) শিল্পের আবর্জনা : 

বিভিন্ন প্রকার শিল্প যেমন— প্লাস্টিক, চামড়া, চিনি, কাগজ, ঔষধ, ডায়িং প্রভৃতি থেকে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন বর্জ্য নিঃসৃত হয় যা পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে।

(ii) নর্দমার আবর্জনা : 

মানুষের গৃহস্থালি ও পয়ঃপ্রণালি নিষ্কাশনে ব্যবহৃত পানি বর্জ্য হিসেবে বিভিন্ন নদীনালা-খালবিলের পানিকে দূষিত করে।

(iii) রাসায়নিক দ্রব্য : 

কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও আগাছানাশক দ্রব্য পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করছে। 

(iv) বিভিন্ন এসিড :

বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত এসিডগুলো শিল্প বর্জ্যের সাথে পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করছে।

(v) ভারি ধাতু : 

বিভিন্ন শিল্প কারখানায়, কৃষিক্ষেত্রে, গৃহস্থালি কাজে বিভিন্ন ধরনের ভারি ধাতু যেমন : আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, মারকারী, জিঙ্ক, কপার, আয়রন ইত্যাদি পানিতে মিশে পানি দূষিত করে।

পানি  দূষণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি 

পানি দূষণ প্রতিকার বা নিয়ন্ত্রণের উপায় : 

পানি দূষণ রোধ বা প্রতিকারে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে- 

১. বিভিন্ন স্থানের বর্জ্য পদার্থ নদী ও খাল-বিলে পতিত হওয়ার পূর্বেই শোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

২. নদীর পানি প্রবাহ যেন ঠিক থাকে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনে নদী ড্রেজিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. মৃত জীবদেহ যেন পানিতে পড়ে না পর্চে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। 

৪. শিল্প কলকারখানার বর্জ্য ও রাসায়নিক দূষক পদার্থ পরিশোধনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ । 

৫. কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো বা বন্ধ করা উচিৎ।

৬. তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাঙ্কার হতে যেন তেল ও অন্যান্য দূষক পদার্থ নদী ও সমুদ্রের পানিতে যেন না মিশে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

৭. পলিথিন ও পাস্টিক দ্রব্য যেখানে সেখানে না ফেলে পুতে ফেলার ব্যবস্থা করা উচিত।

৮. পারমাণবিক বিস্ফোরণ এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার সীমিত রাখা উচিত।

৯. সর্বোপরি পানি দূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন ।

 

Previous article জনসংখ্যা সমস্যা কি? বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনের উপায়। 
Next article Privacy Policy of BPFA – Bancharampur Police Family
আমি সাজ্জাত, অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। কাজ করি এড্রোয়েড এপ্লিকেশন নিয়ে। বর্তমানে শখের বসে ব্লগিং করতে ক্ষুদ্র চেষ্টা। চেষ্টা করি যোগ-উপযোগী ও মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত নানান বিষয় নিয়ে বিস্ময়কর কন্টেন্ট তৈরি করতে।কন্টেন্টের মূল উদ্দেশ্য আপনাদের যোগ-উপযোগী নানান কিছু জানানো নানান কিছু শেখানো এবং সর্বোপরি সুশীল সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু করার প্রচেষ্টা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!