Monday, 13-May, 2024
Homeপড়া-শুনাঅনার্সজনসংখ্যা সমস্যা কি? বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনের উপায়। 

জনসংখ্যা সমস্যা কি? বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনের উপায়। 

যে কোন দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সে দেশের জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে। দেশের সম্পদ ও সুযোগ সুবিধার চেয়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি হলে জনসংখ্যাস্ফীতি দেখা দেয়। বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যা দেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বিবেচনায় জনসংখ্যাকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদেশের জনসংখ্যা সমস্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

জনসংখ্যা সমস্যার সংজ্ঞা : জনসংখ্যা সমস্যা কি?

সহজ কথায় আমরা বলতে পারি, কোন দেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা যদি সে দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত করে, তাহলে তাকে জনসংখ্যা সমস্যা বলে। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, জন্যসংখ্যা সমস্যা হলো জনসংখ্যাজনিত এমন একটি অবস্থা, যে অবস্থায় কোন দেশের জনসংখ্যা সে দেশের সম্পদের সাথে সংগতি বিধান করতে পারে না।

জনসংখ্যা সমস্যার সংজ্ঞায় অর্থনীতিবিদ ম্যালথাস বলেন, কোন দেশের জনসংখ্যা সেদেশের মোট খাদ্য উৎপাদনের পরিমাপের চেয়ে বেশি হলে তাকে জনসংখ্যা সমস্যা বলে। আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ বলেন, কোন দেশের প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে জনসংখ্যা থাকলে মাথাপিছু আয় বেশি হয় তাই বাঞ্চিত জনসংখ্যা। বাঞ্চিত জনসংখ্যা থেকে কোন দেশের জনসংখ্যা বেশি হলে জনসংখ্যা সমস্যার সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনের উপায় :

এদেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনের উপায় হিসাবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে :

প্রাকৃতিক সম্পদ : 

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্ভাব্য সম্পদের প্রতি লক্ষ্য রেখে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

পরিবার পরিকল্পনা : 

বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করার কার্যকর ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণকে এ ব্যাপারে উপদেশ ও উৎসাহিত করতে হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন : 

বাংলাদেশের জনশক্তিকে অর্থনৈতিক কাজে লাগিয়ে দেশের আয় বৃদ্ধি করার জন্য দ্রুত চেষ্টা করতে হবে। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। দেশে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশে দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

জাতীয় আয়ের পুনর্গঠন :

বাংলাদেশের আয় যাতে সকলে ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মাধ্যমে দেশের সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে পারে।

জনসংখ্যার পুনর্বণ্টন : 

বাংলাদেশের যেসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ সে সকল এলাকা থেকে জনসংখ্যা পুনর্বণ্টিত করতে হবে জমির উপর জনসংখ্যার চাপ কমিয়ে দেশে শহরায়ন ও শিল্পায়ন বৃদ্ধি করতে হবে।

কৃষি ও শিল্পের উন্নতি : 

বাংলাদেশে কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়ানো যাবে। এতে করে দেশ শুধু খাদ্য ঘাটতিই পূরণ হবে না উদ্বৃত্ত শস্য বিদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর আয় করা সম্ভব হবে। 

কৃষি বহির্ভূত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা : 

কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং শিল্প সহায়ক আর্থিক সহায়তা দিয়ে শিল্পের সম্প্রসারণ করতে হবে। সেই সাথে কৃষি বহির্ভূত আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. ব্যাপক প্রচার : জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি যে আমাদের দেশের জন্য কত বড় ক্ষতিকর এবং বর্ধিত জনসংখ্যা আমাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা তুলে ধরে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার অব্যাহত রাখা দরকার।

নারী ও পুরুষের সমান মর্যাদা দান : 

নারী ও পুরুষের সমান মর্যাদা দান করা হলে এদেশের জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান হবে। এদেশে পুরুষদেরকে অধিক দাম দেয়া হয় ফলে কন্যা সন্তান হলে তারা পুত্র সন্তানের আশায় বারবার সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে।

জন্মনিয়ন্ত্রণের উপকরণ সহজলভ্যকরণ :

জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপকরণ জনগণের নিকট সহজলভ্য করে তুলতে হবে এবং আরো উন্নতমানের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আবিষ্কার করা দরকার।

নারী শিক্ষার বিস্তার ও মহিলাদের কর্মসংস্থান :

মেয়েদের শিক্ষিত এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তাদের সামাজিক চেতনা ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পাবে যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে সহায়ক হবে।

বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহরোধ : 

বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ সম্বন্ধে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধন করতে হবে। এ সম্পর্কিত মুসলিম পারিবারিক আইনকে কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্যও অনুরূপ আইন করে বহুবিবাহ রোধ এবং বিয়ের ন্যূনতম বয়স ছেলেদের ২৫ বছর এবং মেয়েদের জন্য ২২ বছর করতে হবে।

বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তা বিধান : 

বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করা যায়। কারণ জনগণ মনে করে অধিক সন্তান জন্ম দিলে তারা বৃদ্ধ বয়সে উপার্জন করে খাওয়াবে। এ আশায় তারা সন্তান জন্ম দেয়। তাই বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তা বিধান করে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করা যায়।

জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন : 

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অবস্থা পর্যালোচনা করে একটি জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সারা দেশের জনসংখ্যাকে গবেষণায় মাধ্যমে জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

পরিশেষে আমরা বলতে, উপরিউক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ও দেশের জনগণকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Roma Wasfia
Roma Wasfiahttps://eracox.com
আমি রুমা ওয়াসফিয়া, একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বসে ব্লগিং করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। চেষ্টা করি যোগ-উপযোগী ও মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত নানান বিষয় নিয়ে বিস্ময়কর কন্টেন্ট তৈরি করতে।কন্টেন্টের মূল উদ্দেশ্য আপনাদের যোগ-উপযোগী নানান কিছু জানানো নানান কিছু শেখানো এবং সর্বোপরি সুশীল সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু করার প্রচেষ্টা।

জনপ্রিয় পোস্ট

লেখকের অন্য পোস্ট

error: Content is protected !!