শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান
শুরুলগ্ন
“শেষ বিকেলের মেয়ে ” উপন্যাস টি পড়ার আগে মনে করেছিলাম নিদিষ্ট একজন মেয়েকে নিয়ে সাজানো এই বইটি।কিন্তু বইটি পড়তে গিয়ে দেখলাম আমার ধারনা টা পুরাপুরি ভুল।শেষ বিকেলের মেয়ে মানে এখানে সেই মেয়েকে বুঝিয়েছে লেখক যে, সারাজীবন অনেক মেয়ে জীবনে আসে, আবার চলেও যায়। শেষ অব্দি যে থাকে তাকেই শেষ বিকেলের মেয়ে বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বইয়ের নামকরণ
শেষ বিকেলের মেয়ে নাম টা দেখলেই কোন একটা মেয়ের চরিত্র মানসপটে ভেসে উঠে। মনে হয় একটি মেয়ে কে নিয়ে লেখা।কিন্তু লেখক এই বইটিতে কয়েকটি মেয়ের চরিত্র উপস্থাপন করেছেন।আর বুঝিয়েছেন জীবনের শেষ অব্দি যে থাকবে সেই শেষ বিকেলের মেয়ে। বইটি পড়ার আগে আর পরে নাম নিয়ে দুরকম ধারনা জন্মে পাঠক-পাঠিকাদের মনে।
বইয়ের মূলভাব
লেখক জহির রায়হান শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাস টিতে প্রধান চরিত্রে কাসেদ কে তুলে ধরেছেন।এই উপন্যাসটি পুরোটা জুড়ে রয়েছে কাসেদের জীবন কাহিনি। তার ভালবাসা,কর্মজীবন,পরিবার জীবন বা মন ভালো খারাপের কাহিনি।
বইয়ের সারসংক্ষেপ
বইয়ের প্রধান চরিত্র কাসেদ।সে একজন নিম্নমানের কেরানি।তার পরিবারে তার অসুস্থ মা এবং খালাতো বোন আছে নাম তার নাহার।নাহার ছোট কালে মা কে হারানোর পর থেকে কাসেদ দের সাথে থাকে।উপন্যাস টির শুরুতে বৃষ্টি মুখর দৃশ্য দিয়ে শুরু করে লেখক।এক আকাশ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাসেদ বাসায় ফিরে।বাসায় এসে কিছু টা মায়ের বকুনি খাই।তার নিজের ছাতা কোথায় জিজ্ঞেস করলে জানান দেয় তার অফিসের অন্য কেরানি নিয়ে গেছেন।এই দেওয়া নিয়ে ও অনেক্ষণ মায়ের বকা শুনে রুমে যায় কাসেদ।বাসায় এসে জানতে পারে জাহানারা এসেছিল তার খুজে।জাহানারা হচ্ছে কাসেদের অব্যক্ত ভালবাসা।কাসেদ মনে করে জাহানারাও তাকে ভালবাসে।কাসেদ পরে জাহানারার সাথে দেখা করতে গেলে সেখানে মিলে জাহানার কাজিন শিউলির সাথে। শিউলি একজন স্মার্ট, শিক্ষিত,ম্যাচিউর মেয়ে।তার একটাই কথা সে সকল কে বন্ধু ভাবে মিশে কিন্তু পরে সবাই ওকে বউ করতে চাই।শিউলি কাসেদ জাহানারা তিনজনের বন্ধুত্ব বা প্রেম ভালোই চলছিলো এর মাঝে উপস্থিত হলো সালমা নামে এক মেয়ে।সালমা ছোট কাল থেকেই কাসেদ কে ভালবাসতো।কিন্তু কথা হচ্ছে সালমার সাথে যতবারি কাসেদের দেখা হতো বা কথা হতো প্রতিবারে দুজনের ঝগড়া হতো।সালমা এখন বিবাহিত, তার একটা মেয়ে ও আছে। মেয়ের নাম নাকি লিখেছে পলি।কিন্তু সালমা কাসেদের পছন্দের নাম বিপাশা বলে ডাকে।কাসেদের জীবনে এই কজন মেয়ে ছাড়া ও আরো ও একজন মেয়ের আবাস আসলো।যখন কেরানি মকবুল মিয়ার বাড়ীতে ছাতার জন্য কাসেদ গেলো তখন সে একটা মেয়েকে পিছন থেকে দেখে।তার লম্বা চুলে কাসেদ কেমন আকৃষ্ট হয়ে গেছিলো কবির ভাষায় কৃষ্ণবর্ণ মেয়ে।তাকেও নিয়ে ও কাসেদের মনে কিছু হতো।কিন্তু এই হওয়া টা বেশিদিন টিকলোনা।তার অফিসের বড় বস সেই কৃষ্ণবর্ণ মেয়েটিকে বিয়ে করে নিলো।কাসেদোর মনে সব থেকে বেশী জাহানারার জন্য ভালবাসা ছিল।সে বারবার নিজের ভালবাসা জানাতে চেয়েছে কিন্তু পরে জানলো জাহানারার সাথে তার সেতার মাস্টার এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলতেছে। এই দুঃখে কাসেদ শিউলিকে বলে ফেললো বিয়ে করতে শিউলি ও তাকে রিজেক্ট করলো।এরি মাঝে একদিন সালমা ও এসেছিলো সব ছেড়ে কাসেদের হাত ধরতে কিন্তু কাসেদ মানা করে দেয়।হঠাৎ করে কাসেদের মা ইহকাল ত্যাগ করলেন।তিনি তার মেয়ে নাহারের ঠিক হওয়া বিয়ে টা ও দেখে যেতে পারেন নি।কাসেদের মায়ের মৃত্যুর পর ওর খালু নাহার কে নিয়ে যায়। কাসেদ একা হয়ে যায়। শেষ বিকেলে জানালার দিকে তাকিয়ে যখন ভাবনাতে মত্ত ছিলো তখনি দরজায় করাঘাত হলো।
আচ্ছা কে এলো??
জাহানারা নয়তো? কাসেদের ভালবাসা বুঝতে পেরে ফিরে আসলো।
নাকি শিউলি?? সে ও কাসেদের ভালবাসা ফিল করে ফিরো আসলো।
নাকি সালমা,হাজার রিজেক্ট হওয়ার পর ও কাসেদ কে সে চাই।
নাকি অন্য কেউ।
কে এসেছে শেষ বিকেলের মেয়ে হয়ে জানতে হলে পড়তে হবে এই উপন্যাস টি।
বইটি পড়ে আমার অনুভূতি
উপন্যাস টি পড়ে আমার কষ্ট লাগলো কাসেদের জন্য। নিজের ভালবাসা এভাবে প্রকাশ করার আগে হারিয়ে ফেলা সত্যি যন্ত্রণা দায়ক।সালমার জন্য ও মন টা খারাপ হয়ে গেলো।যাকে ভালবাসে তাকে তো পেলো না আবার পাওয়া স্বামী টাও মনের মতো না।সব থেকে বেশী আকৃষ্ট করেছে নাহার মেয়েটি।সারা উপন্যাস টি তে দুএকটা কথা বলা উল্লেখ রয়েছে এত কম কথা বলা মেয়ে থাকতে পারে নাহার কে না দেখলে জানা হতো না।মেয়েটি সারাক্ষণ সংসারের কাজ নিয়ে থাকে।কারো ভালো মন্দতে নেই সে এই নাহার মেয়োটি আমাকে সব থেকে বেশী আপ্লূত করেছে।সব শেষে বলবো কাসেদ কে আমার কেমন লুচ্চা ধরনের ছেলে মনে হলো।একসাথে এতজন মেয়ের জন্য ফিল আসে কেমনে।জাহানারা,শিউলি, কৃষ্ণবর্ণ মেয়ে কয়জনের জন্য মন থেকে প্রেমের ফিল হয়? তাই আমার মতে কাসেদ একটা লুচু ছেলে।আবার ভালোও।
শেষান্তে
শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাস টি একটা রোমান্টিক উপন্যাস। এই উপন্যাস টি পড়ে আমার অনুভূতি অনেক টা ভালো লেগেছে।নাহার এর চুপ স্বভাব। তার কাজ কর্ম,এবং কাসাদের মায়েট আল্লাহ ভীতি, আল্লাহর ইবাদাতে নিজেকে মশগুল রাখা এই বিষয় টা আমার সব থেকে বেশী ভালো লেগেছে।মোট কথা সব কিছু মন কাড়ানোর মতো বই টি।
বই পরিচিতি
বইঃশেষ বিকেলের মেয়ে
লেখকঃজহির রায়হান
ধরণঃউপন্যাস
প্রকাশনীঃঅনুপম প্রকাশনী
পৃষ্ঠাঃ৮০
মূল্যঃ১২০ টাকা
বুক রিভিউ – ফায়েজা সুলতানা পিউ।