Home বিনোদন বই পুস্তক সুইসাইড নোট

সুইসাইড নোট

0

বুক রিভিউ

সুইসাইড নোট
মো: সহিদুল ইসলাম রাজন

‘সুইসাইড নোট’ বইটির নাম ই রহস্যের মতো। নামটি শুনেই আমার আর দশজনের মতো পড়ার খুব তীব্র ইচ্ছে সৃষ্টি হয়েছিলো। বইটি আমি একদিনে পড়তে পারিনি। অনেকদিন লেগে গেছে। পারিবারিক সমস্যা, ব্যক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পড়ার জন্য আর শক্তি পেতামনা। তবে একটু একটু করে পড়তাম। চাইলেই এক দুইদিনে পড়ে শেষ করতে পারতাম কিন্তু গল্পের চরিত্রগুলোকে রাজন ভাইয়া এত বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে যে আমি প্রথমবার পড়েই অনেক বেশি কষ্ট পাইছি সাথে ভীষণ কান্না ও করছি।
তাই অল্প করে পড়ছি, অল্প করে কষ্ট পাইছি আর অল্প করেই কাঁদছি। শ্রাবণ ভাইয়ার সবকিছু জানার পর নিজেকে খানিকটা শ্রাবণ ভাইয়ার মতোই লেগেছে। তার কষ্টের সাথে, ভালোবাসার সাথে, মা বাবার সাথে পুরোপুরি মিল খুঁজে না পেলেও অনেকটা মিল আমি নিখুঁত ভাবে খুঁজে পেয়েছি। শুধু তার মতো আমার খুন করার সাহস নেই।

এবার আসি বইয়ের কথায়।
শ্রাবণ আর নীলা, তাদের পরিবার সম্পর্ক গুলো যত বেশি সুন্দর ছিলো তার চেয়ে বেশি ছিলো কষ্টের। লেখক সাহেব চাইলেই চরিত্রগুলোকে এত কষ্ট না দিলেও পারতেন। আমি উপন্যাসটি পড়ার সময় এক মুহূর্তের জন্য ও ভাবিনি এটা একটা উপন্যাস। কারণ এত সাবলীল আর জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে সত্যি ভেবেছি এটা একটা জীবন্ত কাহিনি চোখের সামনে ঘটতেছে।

একজন অসহায় সন্তান ই বুঝে মা বাবা থেকেও না থাকার অভাব, মায়া,মমতা,স্নেহ, ভালোবাসার অভাব। কাউকে খুব বেশি ভালোবেসে অবহেলা পাওয়ার কষ্ট অনেক বেশি। বিশ্বাস ভাঙার যন্ত্রণা। তার চেয়ে বেশি কষ্ট ছিলো সেই ভালোবাসার মানুষটার মুখে নিজের মাকে নিয়ে খারাপ ভাষায় গালি শোনার কষ্ট। সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে সেই ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের সাথে দেখা। এই কষ্টগুলোই শ্রাবণ কে তিলে তিলে শেষ করেছে। শ্রাবণ কে অনেক বেশি ভয়ংকর বানিয়েছে। শ্রাবণ এত বেশি কষ্ট পেয়েছে যে শ্রাবণ ভুলেই গেছে মানুষকে মারার মতো কত বড় পাপ করেছে।এত বেশি কষ্ট পেয়েছে যে এতটা ভয়াবহ হতেও পিছপা হয়নি।

কীভাবে শ্রাবণ নীলার প্রেমে পড়লো, কীভাবে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক মজবুত হয়েও অবিশ্বাসের ফাটল ধরলো। কীভাবে শ্রাবণ নীলার বিচ্ছেদের পরও বিয়ে হলো। কীভাবে শ্রাবণ এত কষ্ট-যন্ত্রণা সহ্য করেও এতটা পথ পাড়ি দিলো। কিভাবে শ্রাবণ নীলার করা প্রতিটা অবহেলা, কষ্ট কড়ায়গন্ডায় বুঝিয়ে দিলো। কিভাবে শ্রাবণ ভয়ানক হয়ে উঠলো। কি ছিলো সেই ঝুমুর নামক চঞ্চল কিশোরীর কাহিনি। শ্রাবণের মায়ের শেষ পরিণতির অবস্থা কি ছিল।
নাজিমের শেষ পরিণতি কতটা ভয়ানক ছিলো। কে সুইসাইড করলো,কেন করলো। শ্রাবণের শেষ পরিণতি কতটা করুণ হয়েছে সব জানতে হলে অবশ্যই উপন্যাসটি পড়ুন।
রাজন ভাইয়া এত বেশি সুন্দর উপন্যাস লিখে আমাদের পড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল অনেক। ভবিষ্যতে আরো ভালো ভালো গল্প, উপন্যাস পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম।

শুধু শ্রাবণ ভাইয়ার মাকে দেয়া তার বাবার চিঠিটায় কি লেখা ছিলো সেটাই জানা হলো না।।

সুইসাইড নোটের সবচেয়ে ভালোলাগার বাক্যগুলো–

১. শ্রাবণ: আমাকে কখনো ছেড়ে যেওনা প্লিজ।
নীলা: আমি চলে গেলে আমার পাগলটা কার কোলে এভাবে মাথা রাখবে?

২. কেবল তুমি গুছিয়ে দিবে বলে
আমি অগোছালো হয়ে যাবো আবার,
তুমি নিয়ম করে শাসন করবে বলে
আমি অনিয়ম করবো বারবার।

৩. তাকে আটকে রাখার জন্য করা চেষ্টাগুলোই তাঁকে হারিয়ে ফেলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৪. সে আমার কেবল ভালোবাসা না সে আমার অভ্যাসও।

৫. আমাদের মতো কিছু সুখ পিয়াসী মানুষ আছে যারা সবাইকে খুব সহজে আপন ভাবে, অথচ আমরা একবারের জন্যও বুঝতে চাই না যে বিপরীত মানুষগুলো আমাদের থেকে সবসময় সমদূরত্বে অবস্থান করে, তাই আমরা যত কাছে যাই তারা ঠিক ততটা দূরে সরে যায়।

৬. অথচ তুমিও জানতে তোমাকে ছাড়া আমার ঠিক কতটা কষ্ট হয়।

৭. তোমাকে দেখার এক অদ্ভুত লোভ আমাকে আজীবন দুখি করে রাখবে।

৮. মাকে দেখে মুক্ত পাখির মতো মনে হল, মনে হলো যেন সকল বাঁধা পেরিয়ে এই বুঝি মুক্ত আকাশে উড়বার জন্য বের হলেন। চোখে-মুখে কত সজীবতা লেগেছিল মায়ের, মনে হচ্ছিল গভীর ঘুমে ঘুমাচ্ছেন তিনি। মা সত্যিই মুক্ত হয়ে গেলেন– এক বন্দী সংসার থেকে, বয়ে বেড়ানো অজস্র যন্ত্রণা থেকে, নীলার অহেতুক গালি থেকে। আমার মা সত্যিই মুক্ত হয়ে গেলেন।

৯. আমার কষ্ট হবে ভেবে কেউ পিছন ফিরে তাকায়নি কখনো।

১০. একদিনের আত্মহত্যা মহাপাপ বলে আমরা অনেকেই তা ধীরে ধীরে করি।

১১. আমার এ ঘরে চড়ুই পাখিরা বাসা বাঁধতে আসেনি কোনোদিন, তারাও জানে এ ঘরে সবাই ঘর ভাঙার গল্প বুনে কেবল।

১২. নীলা ঘুমিয়ে পড়ার পর প্রতি রাতে আমি তাকে মন ভরে দেখি, মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে মায়ের কথা মনে পড়ে যায় আমার। মা ঠিক এভাবে ঘুমাতেন। নীলার চোখ, মুখ নিষ্পাপ চেহারা দেখে খুব কান্না পায় আমার, আমি খুব কাঁদি। তাকে আমি আমার করেই রাখবো, কষ্ট দিলেও আমার কাছেই রাখবো। সে যদি আমাকে অবহেলা না করত, মাকে গালি না দিত, তবে কখনোই আমি তাকে কষ্ট পেতে দিতাম না, একটুও না।
আমি তাকে আগলে রাখতাম, আমার সর্বোচ্চ দিয়ে ভালো রাখতে চাইতাম। কেন যে সে আমার সাথে এসব করল? এখন আমাকেও কষ্ট দিচ্ছে৷ নিজেকও কষ্ট দিচ্ছে।

১৩. কিছু কিছু জিনিস জানার থেকে অজানাতে থাকা ভালো এতে অন্তত একটা সুখ পাওয়া যায়, হোকনা সেটা একটা মিথ্যে সুখ, তাও তো সুখ।

১৪.পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের কাজ হলো ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের পাশে দেখা, ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যের সাথে ভাগ করা। নীলা মরে গেলে আমি বাঁচতে পারব, খুব কষ্ট হবে তবুও বাঁচতে পারবো। কিন্তু তাকে অন্যের বুকে আমি কখনোই সহ্য করতে পারবো না। তাদের দু’ জনকেই মেরে ফেলবো কাল, আমি এভাবে কষ্ট সহ্য করতে চাই না আর। আমি একটু শান্তি চাই, শুধু একটু শান্তি।

১৫. এবং দেয়াল জুড়ে বারবার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তিনটি অবয়ব, যাদের পাশে লেখা ছিল–‘আমি মা- বাবা, বাবা-মা আমি, বাবা আমি এবং মা, আমরা।’

১৬. যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি,
যদি ভালোবাসা পাই ব্যপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি।
যদি ভালোবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাব,
যদি ভালোবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
আর সমুদ্র সাতরাবো।
যদি ভালোবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল,
যদি ভালোবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল।( ১৬ নং কবিতাটি রফিক আজাদের বিখ্যাত কবিতা।)

# বই আর মানুষের মধ্যে হোক অন্তমিল।
# বই পাঠকের বন্ধু হোক।
# বইয়ের ভাঁজে খুঁজে পাক অনাবিল সুখ।
# বই হোক প্রতিটি মানুষের সময় কাটানোর একমাত্র সঙ্গী।

( বি:দ্র: এটা আমার জীবনের প্রথম বুক রিভিউ। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

Previous articleWomen Fitness Workout – Privacy Policy
Next articleEnglish Writing Part – Privacy Policy
আমি সাজ্জাত, অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। কাজ করি এড্রোয়েড এপ্লিকেশন নিয়ে। বর্তমানে শখের বসে ব্লগিং করতে ক্ষুদ্র চেষ্টা। চেষ্টা করি যোগ-উপযোগী ও মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত নানান বিষয় নিয়ে বিস্ময়কর কন্টেন্ট তৈরি করতে।কন্টেন্টের মূল উদ্দেশ্য আপনাদের যোগ-উপযোগী নানান কিছু জানানো নানান কিছু শেখানো এবং সর্বোপরি সুশীল সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু করার প্রচেষ্টা।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!
Exit mobile version