Monday, 23-December, 2024
Homeবিশ্ব ও ইতিহাসইতিহাসসেলজুক বেগ - সেলজুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা অগুজ তুর্কী সেনাপতি।

সেলজুক বেগ – সেলজুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা অগুজ তুর্কী সেনাপতি।

সেলজুক বেগ (سلجوق ﺑﯿﮓ; Saljūq beg; এছাড়াও রোমান হরফে লেখা Seldjuk, Seldjuq, Seljuq; আধুনিক তুর্কী: Selçuk; মৃত্যু c. 1038) তিনি ছিলেন একটি Oghuz তুর্কীয় সেনাপতি, এবং সেলজুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা।

সেলজুক বেগের জন্ম ও বংশ।

সেলজুক বেগের জন্ম তারিখ জানা যায়নি তবে তিনি ছিলেন তাকাক এর সন্তান যার উপাধী ছিল তৈমুর ইয়ালিগ যার অর্থ “লোহার ধনুক”(সূত্র-উইকিপিডিয়া)। তিনি তার কর্মদক্ষতা আর সাহসীকতার জন্যই এমন উপাধি লাভ করেছিলেন। ওঘুজ সংস্কৃতিতে তীর এবং ধনুককে সার্বভৌমত্বের লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হতো। আর তাই  সেলজুক বেগের পিতার ডাকনাম বিবেচনা করে বুঝা যায় তিনি কোনও সাধারণ সৈনিক ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একজন সেনাকমান্ডার বা সেনাবাহিনীর প্রধান। তিনি ছিলেন ওর্গুজ কাইনিক গোত্রের গুত্রপতি। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, তাকাক একজন শক্তিশালী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন এবং ওঘুজ ইয়াবগু রাজ্যে প্রচুর শক্তি ও প্রভাবের অধিকারী ছিলেন ধারনা করা হয় যে ৯২৪ সালের দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন৷

সেলজুক বেগের জেন্ডে স্থানান্তর

পিতা তাকাকের মৃত্যুর পর সেলজুক বেগ ক্ষমতার মসনদে আসীন হন। সেলজুক বেগ ছিলেন অন্যান্য গোত্রপতি থেকে একটু ভিন্ন। অসীম সাহসিকতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ঐ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য গোত্রের লোকেরাও তাকে অনেক সম্মান করতো৷ কোনো এক অজানা কারণে সেলজুক বেগের সাথে ওঘুজ ইয়াবগুদের সম্পর্কের একটি টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।

আরোও পড়ুনঃ- সুলতান আল্প আরসালান – মালাজগ্রিট যুদ্ধের মহানয়ক।

তখন পরিস্থিতি আরো অবনতি হলে ৯৮৫ সালে সেলজুক গোত্র আরল এবং ক্যাস্পিয়ান সমুদ্রের মাঝামাঝি বিশাল আয়তনের এলাকায় টুকুজা-ওগুজের কয়েকটি গোত্রের সঙ্গমৈত্রি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান দক্ষিণ-মধ্য কাজাখস্তানের নিম্নতর আমু-দরিয়ার ( জ্যাকসেটস ) ডানদিকের তীরে তারা তাবু স্থাপন করে যা জেন্ডের অভিমুখে। এটা কিজেল অড়ডার কাছাকাছি।

ধারনা করা হয় যে এই হিজরতের সময় সেলজুক বেগের সাথে ১০০ জন ঘোড়সওয়ার, ১৫০০ উট এবং ৫০,০০০ ভেড়া ছিল? প্রতিটি ঘোড়সওয়ার যদি একটি পরিবারের সমতুল্য হন, সেলজুকরা যারা জেন্ডে চলে এসেছিলেন তারা সম্ভবত প্রায় ৫০০-৭০০ জন লোকের একটি ছোট যাযাবর সম্প্রদায় ছিলেন।

সেলজুকদের ইসলাম গ্রহণ

বর্তমান দক্ষিণ-মধ্য কাজাখস্তানের নিম্নতর আমু-দরিয়ার (জ্যাকসেটস) ডানদিকের তীরে তারা তাবু স্থাপন করে যা জেন্ডের অভিমুখে পড়ে। এটা কিজেল অড়ডার কাছাকাছি। সেলজুক বেগের গোত্রের নতুন অঞ্চলে স্থানান্তরিত হওয়া আগেও তারা মুসলিম ছিলো না৷ তখন তারা ইহুদী বা নেস্টেরিয়ান খ্রিস্টধর্মের অনুসারী ছিলো বলে ধারণা করা হয়।

দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জেন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জাঁকজমকপূর্ণ সীমান্তবর্তী শহর রুপে পরিগনিত হতো৷ সেখানের চারণভূমিগুলোতে বিভিন্ন যাযাবর গোত্র বসবাস করতে দেখা যেত। শহরটিতে তখনকার সময়ের মুসলিম বনিক এবং ধর্মপ্রচারকদের আনাগোনা ছিলো। আর সেই সুবাদেই সেলজুকরা জেন্ডে এসে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করেন। এটি ঘটেছিল ৯৮৫ সালে। (সুত্র- উইকিপিডিয়া)

মালিক আল গাজি উপাধিতে সেলজুক বেগ

ইসলাম গ্রহণের পরে সেলজুক বেগ ওঘুজ ইয়াবগু কর্তৃক বার্ষিক কর আদায়ের জন্য জেন্ডে প্রেরিত কর্মকর্তাদের কর প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, “মুসলমানরা কাফেরদের কখনো কর নিবে না”।
এর ফলে অমুসলিম তুর্কীদের সাথে সেলজুক বেগ যুদ্ধে জরিয়ে পরেন। তিনি ইসলামে প্রবেশ করার পর বীরত্বের সাথে অমুসলিম তুর্কীদের সাথে লড়াই করে যান। তার বীরত্বের জন্য তাকে মালিক আল গাজি উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

সেলজুক বেগ’র সন্তান ও নামকরন

সেলজুক বেগের মোট চারজন পুত্রসন্তান ছিল। তার চার পুত্রের নাম – মিকাইল বেগ (মিকাইল বেগ পরবির্তীতে তিনি গুত্রপতি হয়েছিলেন), ইস্রাইল (আরসালান), মুসা (মূসা) এবং ইউনুস (ইউনুস)। এই নামগুলো খাজার ইহুদী বা নেস্টেরিয়ান খ্রিস্টধর্মের পূর্বের পরিচিত ব্যক্তিদের নাম থেকে নেওয়া হয়।

এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটেছিল। আর সেটি হচ্ছে সেলজুকের বড় ছেলে মিকালের মৃত্যু। মিকাইলের দুই সন্তান ছিল৷ তুঘরিল বেগ ও চাগরি বেগ। তারাই পরবর্তীতে সেলজুক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করছিলেন৷ এই ঘটনার পরে, মিকালের স্ত্রী (তুঘ্রিল এবং ছাগরীর মা) সেলজুকের অন্য ছেলে ইউসুফকে বিয়ে করেছিলেন।

পুরাতন তুর্কি ঐতিহ্য অনুসারে মিকাইলে ইবনে সেলজুকের দুই পুত্র তুগরুল এবং চাঘরি তাদের দাদা সেলজুক বেগের কাছেই লালিত-পালিত হতে থাকে।

সেলজুক বেগ’র রাজনৈতিক মতাদর্শঃ

কিছু সূত্রে জানা যায়, সেলজুক সেনাবাহিনীতে একজন সাধারণ সেনানায়ক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং আস্তে আস্তে নিজের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দেখাতে সক্ষম হন। জেন্ড এবং এর আশেপাশের যুদ্ধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জনকারী সেলজুক ধীরে ধীরে ট্রান্সসক্সানিয়া’র রাজনৈতিক ইভেন্টে প্রবেশ করতে শুরু করেছিলেন।

এ সময় কারা-খানিদের শাসক হাসান বিন সুলায়মান বুঘরা খান সামানি সাম্রাজ্যের শহর বুখারা দখল করেছিলেন। সামানি সাম্রাজ্য তখন সেলজুক বেগ কে বুঘরা খানের বিরুদ্ধে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে পরে, সেলজুক বেগ তার ছেলে আরসলানকে (ইস্রাইল)কে ট্রান্সস্যাকিয়ানাতে প্রেরণ করেছিলেন সামানীদের সাহায্য করার জন্য।

পুত্র আরসলানের হাতে ক্ষ্মমতা হস্তান্তর

যেহেতু সেলজুক ধীরে ধীরে বুড়ো হয়ে যাচ্ছিল, প্রশাসন এখন তিনি তাঁর বড় ছেলে আরসলান (ইস্রাইল) এর হাতে তুলে দেন। এরই মধ্যে সামানা রাজ্য, যা তার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিল। কারা-খানিদদের দ্বারা বারবার আক্রমণ এর শিকার হয়েছিল এবং প্রতিবারই সেলজুকরা তাদের সাহায্য করেছিল। এভাবে সেলজুক বেগের সন্তান আরসলানকে তিনি সামরিক দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ দিয়েছিলেন।

ফিরিক, আবির আল সিমকার এবং বেক-টাজিনের অভ্যন্তরীণ অশান্তির দ্বারা যখন সামানি রাজ্যের ভীত কাঁপছিল তখনই কারা-খানিদরা যারা ট্রান্সসোকিয়ানাতে প্রবেশ করেছিলেন এবং দ্বিতীয়বার (৯৯৯) বোখারা দখল করেছিলেন, চুড়ান্ত আক্রমণ করে বসেন।

আরসলানের অধীনে সেলজুকস সামানী রাজবংশের সর্বশেষ সদস্য (১০০৩) আবুब्र্রাহিম শসমা’ল আল মুনতাসিরকে (১০০০-১০০৫) সামরিক সহায়তা দিয়েছিলেন। যদিও সেল্টুয়াকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সমর্থন পেয়ে ইলিগ খান নসরের নেতৃত্বে আল মুনতাসির কারা-খানিদ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছুটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন, তবে তিনি সামানি রাজ্যের পতন রোধ করতে পারেননি।

এই ঘটনার পরে, পুরো ট্রান্সস্যাক্সিয়ানা কারা-খানিদ প্রশাসনের অধীনে আসে। পরে সেলজুকরা কারা-খানিদ সাম্রাজ্যের আনুগত্য স্বীকার করে।

সেলজুক বেগ’র মৃত্যুঃ

সেলজুক বেগ প্রায় আশি বছর বয়সে জাণ্ডে মারা যান ১০৩৯ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর মৃত্যুর পরে, তাঁর তিন বেঁচে থাকা পুত্রের মধ্যে আরসলান ইসরাল পুরাতন ওঘুজ ঐতিহ্য অনুযায়ী পূর্ণ প্রশাসনিক দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। এদিকে, মিকাইলের ছেলেরা তুগরুল বা তুঘরিল এবং চাঘরি ১৪-১৫ বছর বয়সে প্রশাসনে “বেগ” হিসাবে স্থান লাভ করেন। যদিও আরসলান ইয়াবগু পরিবারের প্রধান ছিলেন, তবুও সেলজুকের ছেলেরা এবং নাতি নাতনিরা তুর্কিমান বেগস এবং তাদের সাথে যুক্ত অন্যান্য বাহিনীকে পুরানো ওঘুজ ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আধা-সংযুক্ত পদ্ধতিতে শাসন করেছিলেন।

পরিশেষে…

সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অকুতোভয় বীর সেনানী সেলজুক বেগের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং থাকবে। তার বীরত্ব আর রাজনৈতিক দুরদর্শিতার কারণে ক্ষুদ্র যাযাবর গোত্রটি একসময় পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকের পরিমান নিজেদের শাসনের আয়ত্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Sazzat Hj
Sazzat Hjhttps://eracox.com/
আমি সাজ্জাত, অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। কাজ করি এড্রোয়েড এপ্লিকেশন নিয়ে। বর্তমানে শখের বসে ব্লগিং করতে ক্ষুদ্র চেষ্টা। চেষ্টা করি যোগ-উপযোগী ও মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত নানান বিষয় নিয়ে বিস্ময়কর কন্টেন্ট তৈরি করতে।কন্টেন্টের মূল উদ্দেশ্য আপনাদের যোগ-উপযোগী নানান কিছু জানানো নানান কিছু শেখানো এবং সর্বোপরি সুশীল সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু করার প্রচেষ্টা।

জনপ্রিয় পোস্ট

লেখকের অন্য পোস্ট

error: Content is protected !!