পুদিনা পাতা যার ইংরেজি নাম Spearmint । স্পিয়ারমিট বা পুদিনা পাতা অনেক নামে পরিচিত হয়ে থাকে যথাঃ- উদ্যান পুদিনা, সাধারণ পুদিনা, মেষশাবক পুদিনা এবং ম্যাকারেল পুদিনা নামেও পরিচিত। পুদিনা, মেন্থ স্পাইকাটা একটি প্রজাতি যা ইউরোপ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় এশিয়ার অধিবাসী, পশ্চিমে আয়ারল্যান্ড থেকে পূর্বে দক্ষিণ চীন পর্যন্ত বিস্তৃত আছে।
এবার আসা যাক আমাদের মূল টপিকে,পুদিনা পাতা দেখতে ছোট হলেও এর গুণ অনেক রয়েছে। আজ আমরা সেই গুনা গুন ও উপকার নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। চলুন শুরু করা যাকঃ-
পুদিনা পাতা ত্বক, চুল ও শরীর—তিনটির জন্যই বেশ উপকারী। যেকোনো পরিচর্যার জন্য কয়েকটি পুদিনা পাতাই যথেষ্ট।
ড্রাগন ফল এর উপকারিতা ও গুনাগুন – বিস্তারিত
ব্রণের ওষুধ পুদিনা
খুব দ্রুত ব্রণ দূর করতে পুদিনাপাতা দারুণ কাজ করে। ব্রণ দূর করতে এবং ত্বকের তেলতেলে ভাব কমাতে তাজা পুদিনা পাতা বেটে ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার রস লাগান। সম্ভব হলে সারারাত রাখুন। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কমপক্ষে ২/৩ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মাসখানেক এইভাবে লাগালে ব্রণের দাগ উধাও হয়ে যাবে।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য পুদিনা
দুই টেবিল-চামচ চটকানো কলা এবং ১০ থেকে ১২টি পুদিনাপাতার পেস্ট মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এই প্যাক সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে পারেন।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে পুদিনা পাতা
ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতে ১০-১২টি পুদিনাপাতা বেটে তার সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে এক টেবিল-চামচ মুলতানি মাটি, আধা টেবিল-চামচ মধু ও আধা টেবিল-চামচ টক দই। ঘন মিশ্রণ হওয়া পর্যন্ত মেশাতে থাকুন। ঘরেও তৈরি করে নিতে পারেন টক দই।
মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুবার এটা ব্যবহার করলে ত্বকের তেলতেলে ভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ছাড়া পুদিনাপাতা মেশানোর ফলে এতে খনিজ উপাদান যোক্ত হয় এবং বাড়তি তেল দূর হয়ে ত্বক কে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য পুদিনা
শুষ্ক ত্বকের জন্য ১০ থেকে ১২টি পুদিনাপাতা বেটে তার সঙ্গে ২ টেবিল-চামচ টক দই ও এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে ঘন পেস্ট করতে হবে। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক মসৃণ, আর্দ্র ও কোমল রাখতে এই ফেস প্যাক খুবই কার্যকর।
চুলের উকুন নির্মূলে পুদিনা পাতা
চুলে উকুন হলে পুদিনার শেকড়ের রস লাগাতে পারেন। উকুনের মোক্ষম ওষুধ হল পুদিনার পাতা বা শেকড়ের রস। গোটা মাথায় চুলের গোড়ায় এই রস ভাল করে লাগান। এরপর একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দু বার এটা করুন। এক মাসের মধ্য চুল হবে উকুনমুক্ত।
সর্দি কাশির চিকিৎসায় পুদিনা
সর্দি হলে নাক বুজে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো মারাত্মক কষ্ট পান অনেকেই। সেই সময় যদি পুদিনা পাতার রস খান, তাহলে এই কষ্ট থেকে রেহাই পাবেন নিমেষে। যাঁরা অ্যাজমা এবং কাশির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের তাৎক্ষণিক উপশমে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী। খুব বেশি নিঃশ্বাসের এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে সেই জলেরর ভাপ নিতে পারেন। ভাপ নিতে অসুবিধা হলে গার্গল করার অভ্যাস তৈরি করুন।
ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে পুদিনা পাতা
গোলাপ, আমলা, বাঁধাকপি ও শশার নির্যাস করে তার সাথে পুদিনার নির্যাস একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে মুখে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক মসৃণও হয়।
পেটের ব্যথা কিংবা পেটের নানান সমস্যায় পুদিনা
পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা পেটের যে কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে খুব দ্রুত। যাঁরা হজমের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা কিংবা পেটের নানান সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাঁরা খাবার কাওয়ার পর ১ কাপ পুদিনা পাতার চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। ৬/৭টি তাজা পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে খুব সহজে পুদিনা পাতার চা তৈরি করতে পারেন ঘরের মধ্যেই।
শরীরকে ঠান্ডা রখতে পুদিনা পাতা
গরমকালে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখাতে পুদিনার রস খুব ভাল। গোসলের আগে জলের মধ্যে কিছু পুদিনা পাতা ফেলে রাখুন। সেই জল দিয়ে স্নান করলে শরীর ও মন চাঙ্গা থাকে।
ত্বকের সংক্রামণ (ঘামাচি, অ্যালার্জি) ঠেকাতে পুদিনা
এই পাতার রস ত্বকের যে কোনো সংক্রমণকে ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। শুকনো পুদিনা পাতা ফুটিয়ে পুদিনার জল তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন। এক বালতি জলে দশ থেকে পনেরো চামচ পুদিনার জল মিশিয়ে স্নান করুন। গরমকালে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া-জনিত বিশ্রী দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পেতে এটা ট্রাই করতে পারেন। কেননা পুদিনাতে রয়েছে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট। ঘামাচি, অ্যালার্জিও হবে না।
শরীরের ব্যথা দূরকরতে পুদিনা
তাৎক্ষণিক যে কোনও ব্যথা থেকে রেহাই পেতে পুদিনা পাতার রস খুব উপকারী। চামড়ার ভেতরে গিয়ে নার্ভে পৌঁছে নার্ভে পৌঁছায় এই রস। তাই মাথা ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পুদিনাপাতা ব্যবহার করা যায়। মাথা ব্যথা হলে পুদিনা পাতার চা পান করতে পারেন। অথবা তাজা কিছু পুদিনাপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টে ব্যথায় পুদিনাপাতা বেটে প্রলেপ দিতে পারেন।
বুকের কফ দূর করতে পুদিনা
যদি আপনার বুকে কফ জমে তাহলে পুদিনা আপনার জন্য কারণ নিয়মিত পুদিনা পাতার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে বুকে কফ জমতে পারবে না ।
ড্রাগন ফল এর উপকারিতা ও গুনাগুন – বিস্তারিত
পুদিনা পাতা’র অন্যান্য গুণাবলী
১। বিষাক্ত জন্তুর বিষ নষ্ট করার গুণ আছে পুদিনায়।
২। পুদিনা পাতা পুড়িয়ে যদি সেই ছাই দিয়ে দাঁত মাজা যায় তাহলে দাঁত শক্ত ও মজবুত হয়।
৩। পুদিনা পাতার ভেতরে উপস্থিত নানাবিধ উপকারী উপাদান পেটের রোগ সারানোর পাশাপাশি ওজন কমাতে সহায়তা করে।
৪। রোদে পোড়া ত্বকের জ্বালা কমাতে পুদিনা পাতার রস ও অ্যালোভেরার রস এক সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন সানবার্নের জ্বালা গায়েব।
৫। এমনি মান্সিক অবসাদকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং নানাবিধ ত্বকের রোগের চিকিৎসাতেও পুদিনাপাতা ব্যবহ্ণত হয়।
৬। আশ্চর্যজনক হলেও পুদিনাপাতার গুণ খুব সত্য পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতার পেরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
৭। প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ থাকার কারণে ত্বকের ব্রণের সমস্যা সারাতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই।
৮। যাদের পায়ে গোদ আছে তারা পুদিনা পাতা সেদ্ধ করে বেটে মিয়ে মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে উপকৃত হবেন।
আজই পুদিনা পাতা খাওয়া বা সেবন করার চেষ্টা করুন। আর আপনার মূল্যবান মতামত আমদের জানান নিচের কমেন্ট বক্সে। আপনার লেখা পাঠাতে বা লিখতে চাইলে যোগাযোগ করার অনুরোদ করা হল।