ভারতের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ না ঘটার কারণসমূহ।
অথবা,
ভারতের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ না করার কারণগুলো।
শুরুর কথা:
দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভারত একটি বৃহৎ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতে এরও রয়েছে একটি সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। বিভিন্ন উন্নত দেশে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করেছে বারবার কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে সামরিক বাহিনী প্রবেশ করেনি।
→ ভারতের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ না ঘটার কারণসমূহ : নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ না করার কারণ :
গণতন্ত্রের প্রতিপূর্ণ বিশ্বাসঃ-
ভারতের জনগ্ণের রয়েছে তার গণতন্ত্রের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আস্থা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যতীত অন্য কোনো কিছু তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যার ফলে সামরিক বাহিনী ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ পায়নি।
সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতি :
প্রায় দু’শ বছরের শাসন ও শোষণের পর ভারতের এ স্বাধীনতা অর্জন হওয়ার পরেই যথাসময়ে নির্বাচনগুলো যথাসময়ে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ফলে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পদ্ধতি ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ফলে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পদ্ধতি গড়ে উঠেছে, ফলে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসতে পারেনি।
সামরিক বাহিনীর ঐতিহ্য :
ভারতের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ না করার নূন্যতম কারণ হল এটি যা ভারতের সেনাবাহিনী একটি ঐতিহ্যের দাবিদার। ব্রিটিশদের সময় থেকেই সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাছাড়াও সামরিক বাহিনীকে কখনো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত করেনি। সামরিক বাহিনীর এ ঐতিহ্যবোধ তাদের ক্ষমতা দখলে অনুপ্রাণিত না করে; বরং বিরত রেখেছে।
বিশাল ভূখণ্ড :
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতই বিশাল আয়তনবিশিষ্ট বিভিন্ন গোত্র, বর্ণ, ধর্ম এখানে বাস করে, ভারতকে “National state” না বলে ‘State Nation’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ করা অসম্ভব। তাই ভারতের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ একেবারেই অসম্ভব।
সুযোগ্য নেতৃত্ব :
দক্ষ শাসক ও শাসননীতি যেকোনো রাষ্ট্রকে একটি যোগ্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে। ভারতেও দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণেই কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলতা দেখা দেয়নি। গান্ধীজী, নেহেরু লাল, বাহাদুর শাস্ত্রী ও ইন্দিরা গান্ধীর যোগ্য নেতৃত্ব রয়েছে। সেজন্য সেখানে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের সুযোগ পায়নি।
জাতীয়তাবাদের অনুভূতি :
১ম বিশ্বযুদ্ধের পর গান্ধীজীর নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী যে জাতীয়তাবাদের বীজ রোপণ করা হয়েছিল তা জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ আন্দোলন এর রূপ নেয়। ফলে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা হস্তক্ষেপের সুযোগ পায়নি।
সংসদীয় ব্যবস্থার সফলতা :
১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রচলিত। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বিভিন্ন জনের হাতে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়েছে, যার ফলে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
সামরিক বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ :
ভারতের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ না করার কারণ হল ভারতের জনগণ ও সরকারের কাছে সেনাবাহিনী একটি অমূল্য সম্পদ এবং তাদেরকে কখনও অবহেলার চোখে দেখেনি। অর্থাৎ সেনাবাহিনী জনগণ ও সরকারের নিকট স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। যার ফলে সামরিক বাহিনী কখনোই সরকারের প্রতি ঘৃণা বা বিতৃষ্ণা ও ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেনি।
পরিশেষে:
উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, যেসব কারণে কোনো দেশে সামরিক বাহিনীর আগমন হয় ভারতে সেসব কারণগুলো অনুপস্থিত। এর ফলে সামরিক বাহিনী দেশের রাজনীতি নিয়ে ভাবার তেমন সুযোগ পায়নি। ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে কখনোই সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে না।
(আমাদের কে লেখা পাঠাতে পারেন আপনার। চাইলে আমাদের ফেসবুকে যুক্ত হতে পারেন।)