নবি জীবনের গল্প বই টি আরিফ আজাদ রচিত অসাধারণ একটি বই প্রকাশনায় রয়েছে সমকালীন প্রকাশন।
“এইসব ভালোবাসা মিছে নয়” দিয়ে শুরু করে “ফাতিমার জন্য ভালবাসা” তে শেষ করে সর্বমোট মোট ২১টা গল্পের মাধ্যমে নবিজী সাঃ এর জীবনী তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
নবি জীবনের গল্প বইটি প্রিয় নবীজি (সাঃ) কে ভিন্নভাবে দেখার দূরবীক্ষণ যন্ত্র। সীরাতের বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকা নববী মণিমুক্তো। এই বইটিতে নবী জীবনের প্রতিটি পঙক্তি মধুময় হয়ে আছে নানা ঘটনায় মাধূর্যে।
আরিফ আজাদ এই বইতে সেই মুহুর্তগুলো এঁকেছেন কলমের কালিতে। গল্পে গল্পে তিনি দেখিয়েছেন – নবী সাঃ কেমন ছিলেন ঘরে-বাইরে, মসজিদ-মজলিসে, মদিনার অলি গলিতে, সাহাবিদের সাথে, শক্ত চাটাইয়ে, কেমন সময় কাটাতেন প্রিয়তমা স্ত্রীদের সাথে, নিশি জাগরণে রবের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে। বইটির পরতে পরতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের জীবনী। জন্ম থেকে শুরু করে শারীরিক গড়ন, জীবন গঠনের দিকনির্দেশনাবলি- সবকিছুই স্বমহিমায় আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন প্রিয় লেখক।
নবি জীবনের গল্প
বইয়ের কিছু ভালো লাগার মতো লেখাঃ
১। মেঘের আড়ালেও লুকিয়ে থাকে একফালি সূর্যরশ্মি।ঘন আঁধারের মাঝেও বিদ্যুৎ চমকায়।
২৷ শত্রু যতোই সৎ আর ভালো মানুষ হোক৷ দিনশেষে সে তো শত্রুই।
৩। শত্রুকে বন্ধু বানাবার সামান্য সুযোগ ও যদি আমাদের থাকে, আমাদের উচিত সেটা কাজে লাগানো। কারণ যদি একটা পথভোলা, দিগভ্রান্ত আত্মাকেও ফিরিয়ে আনা যায় হিদায়াতের পথে, সেটা হবে আমাদের জীবনের অন্যতম পাওনা।
৪। মানুষ ভুল করে। কিন্তু ভুলটাকে ভুল দিয়ে নয়, সেটাকে সংশোধন করতে হয় ভালোবাসা দিয়ে।
৫। শত্রুর জন্য ও দোয়া করতে পারাটা বিরাট গুণ। এই গুণে প্রতিবিম্বিত হয় ধৈর্যের আবরণ।
৬। ভালোবাসা আর ঘৃণা, দুটোই হতে হবে আল্লাহর দ্বীনের জন্য। কোনো শত্রুর মাধ্যমে যদি দ্বীনের কোনো কল্যাণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যতো ঘৃণাই করুক না কেনো, সবকিছু ভুলে গিয়ে আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করতে পারি, তার হিদায়াত চাইতে পারি আল্লাহর কাছে।
৭। বাস্তবতা মাঝে মাঝে স্বপ্নকেও হার মানায়।সত্য মাঝে মাঝে রূপকথার গল্পের চাইতেও বেশি অবিশ্বাস্য হয়ে ওঠে।
৮। চারপাশে এমন অনেকেই আছে যারা আমাদের ঘৃণা করে। আমাদের তিরস্কার করে নিজেদের আত্মাকে তুষ্ট করার লোক দুনিয়াতে কম নেই। তাদের ঘৃণার বদলে যদি আমরাও ঘৃণার চাষাবাদ করি, যদি তিরস্কারের জবাব দিই তিরস্কারে, তাহলে হয়তো কোনোদিন তাদের সামনের আমরা সত্য নিয়ে দাড়াতে পারবো নাহ।
৯। যারা মিছেমিছি বড় আর মহান সাজে তারা সত্যিকার অর্থে বড় নয়। বড়ো তারাই যারা সত্যটা নিঃসংকোচে স্বীকার করতে পারে।
১০। আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য, সে এমন এক নেশা, এমন এক প্রেমের সুধা যার কাছে দুনিযার সবকিছুই তুচ্ছ।
১১। যত বড় নেতা আপনি হোন না কেনো, অন্যের মতামতকে যদি গুরুত্ব দিতে না পারেন, তাহলে নেতা হিসেবে আপনি কখনো পরিপূর্ণ হতে পারবেন নাহ।
১২। যতো দুঃখ কষ্ট আর বেদনাই ভর করুক জীবনে, আমরা কখনোই এতোটা ভেঙে পড়বো নাহ, যতোটা ভেঙে পড়লে আমরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
লাভ ক্যান্ডি – একটি পারিবারিক প্রেসক্রিপশন। বই টি পড়তে কিংবা গিফট করতে পারেন প্রিয়তমা বা প্রিয়তম কে।
ইতিবাচক দিকঃ
বইটির সব দিক ই ইতিবাচক। যে মহামানব কে ঘিরে এই বইটি রচিত তিনিই তো আমাদের একমাত্র আদর্শ।
নেতিবাচকঃ
নেতিবাচক কিছুই দৃষ্টিগোচর হইনি আমার। বরং যতোই পড়েছি ততো ই মুগ্ধ হয়েছি।
ব্যক্তিগত মতামতঃ
ব্যক্তিগত মতামত কি লিখবো নিজেও কিছুটা কনফিউশানে আছি। বইটি ভাগ ভাগ করে গল্পের মাধ্যমে নবিজী সাঃ এর জীবনের প্রতিটি ক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি গল্প পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। যতগুলো ঘটনা এই বইটিতে বর্ণিত হয়েছে, তার বেশিরভাগ সম্পর্কে আমি জ্ঞাত থাকলেও এতোটা বিস্তারিত ভাবে জানতাম নাহ। অনেক অনেক কিছু শিখতে, জানতে পেরেছি বইটি থেকে। প্রতিটি গল্পের শেষে ছিলো অনুপ্রেরণা মূলক কথা। যা আমাদের কে নবী সাঃ এর আদর্শে অনুপ্রাণিত করে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শুধু একজন মহামানব নন, তিনি ছিলেন একজন রাষ্ট্রনায়ক, সেনাপতি, শিক্ষক, হাস্যমুখর একজন স্বামী, আদর্শবান পিতা, দরদী বন্ধু।
রাষ্ট্র জীবন, ব্যক্তিজীবন এই দ্বিমুখী জীবনের ব্যস্ততা কাটিয়ে স্ত্রীদের সময় দিতে, চমকে দিতে ভুলতেন নাহ। একাধিক স্ত্রী থাকলেও সকলের অধিকারের বিষয়ে তিনি সর্বদাই সমান সতর্ক ছিলেন।
বইটিতে আলোচিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। শুধু শিখলেই হবেনা শিখে তা নিজের জীবনে বাস্তবে প্রয়োগ করলেই আমাদের জীবনের সার্থকতা হাসিল হবে।
বইটা আমাদের সকলের পড়া উচিত। বিশেষ করে জেনারেল লাইনের ছেলেমেয়েদের। জেনারেল পড়াশোনায় অতটুকু পড়ানো হয় যতটুকু ইসলামিক বইয়ে থাকে। বর্তমানে এমন অনেকে আছেন যারা নবী (সাঃ) এর জীবন সম্পর্কে অনেকটা অজ্ঞাত। বইটা পড়লে তারা বিশেষ ভাবে উপকৃত হবেন।
সবশেষে, প্রিয় লেখকের প্রতি রইলো অশেষ কৃতজ্ঞতা। এমন আরো বই আপনার কাছ থেকে আশা করছি। আল্লাহ আপনার মেধাশক্তি ও হাতে বারাকাহ দান করুক। আপনার হায়াতে বারাকাহ দান করুক যাতে আপনি আমাদের হিদায়াতের পথে আসার জন্য এমন আরো বই উপহার দিতে পারেন। পথহারা তরুণ-তরুণীরা যেনো সত্যের দিশা পেতে সক্ষম হয়।
আশা করি ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ আমরা ভুলের উর্ধ্বে নই। সকলে ভালো থাকুন।