Home বিনোদন বই পুস্তক লাভ ক্যান্ডি – একটি পারিবারিক প্রেসক্রিপশন।

লাভ ক্যান্ডি – একটি পারিবারিক প্রেসক্রিপশন।

0

লাভ ক্যান্ডি বইটি AA Book Shop থেকে কিনেছিলাম নব বিবাহিত এক বন্ধু কে উপহার দেবার জন্য। কিন্তু বইটি হাতে পেয়ে নিজে পড়ার লোভটা আর সামলিয়ে উঠতে  পারিনি। কারণ, বইয়ের লুক্টাই অসাধারণ ও খুব সুন্দর। দেখলেই একটা অন্যরকম অনুভূতি ও ভালো লাগা কাজ করে। তাই বইটি না পড়ে পারলাম না! তাই আজ বিস্তারিত জানে হাজির হলাম আপনাদের মাঝে।

“ওরা নিভৃতে লালসা পূরণের মাঝে ভালোবাসার প্রমাণ খুঁজে পায় আর আমি মোনাজাতে জান্নাতেও একসাথে থাকার কামনা করার মাঝে ভালোবাসার প্রমাণ খুঁজে পাই”

“ওরা পরস্পরের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ডের মধ্যে বিশ্বস্ততা খুঁজে পায় আর আমি গভীর রাতে উভয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ পড়ার প্রতিজ্ঞা করার মাঝে বিশ্বস্ততার প্রমাণ পাই”

কি প্যারা দুটি পড়ে অবাক হচ্ছেন!! অবাক হওয়ার ই কথা লাভ ক্যান্ডি থেকে নেওয়া বলে কথা। কারণ  জাফর বিপি ‘লাভ ক্যান্ডি’ বইটিতে মুলত ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়াদি তুলে ধরেছেন।

বইটা খোলার পর আরও অবাক হলাম লেখকের উৎসর্গ করা দেখে। লেখক তার ছোট্ট আম্মু নুসাইবা নুহাকে বইটি উৎসর্গ করেছে। কত সহজ সাবলীল অনুভূতির প্রকাশ।

লেখক আর পাঠকের মধ্যে চিন্তাচেতনা,অনুভূতির যে সম্পর্ক গড়ে উঠে তা তো মূলত ভাষার মাধ্যমেই। যদি ভাষাটা সহজ সরল হয় তাহলে পাঠক খুব সহজেই গল্পের চরিত্রের মাঝে নিজেকে খুঁজে পায়। আর যদি সেই মূল মাধ্যমটাই কঠিন হয় তবে পাঠকের সাথে লেখকের ভাবের মাঝে একটা চীনের প্রাচীর রয়েই যায়।

একজন স্বামী কি কারণে অন্য নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত হয় বা হতে পারে কিংবা একজন স্ত্রী কি কারনে নিজের কদর হারিয়ে ফেলনায় পরিণত হয় তা জাফর বিপি খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন তার লাভ ক্যান্ডি নামক বইটিতে।

এখানে স্বামী স্ত্রীর নিঃস্বার্থ নির্মল ভালোবাসা ফুটে উঠেছে।আদিবের কর্তব্যনিষ্ঠা ও স্নেহার বুদ্ধিমত্তা এবং একে অপরের প্রতি গভীর আস্থা,বিশ্বাস ও ভালোবাসায় গড়ে উঠেছে একটি আর্দশ সংসার।

সন্তানের প্রতি মায়া-মমতা,শাশুড়ি ও দেবর-ননদের প্রতি  দায়িত্ববোধ কর্তব্য-নিষ্ঠা,স্বামীর জন্য পরিপাটি হয়ে থাকা ভালবাসার মায়াজালে বাধা। আবার কখনো কখনো চন্দ্রবিলাসে মেতে ওঠা, একে অপরের সুখ-দুঃখে একাকার হওয়া,পরিবারকে সময় দেওয়া, মাঝেমধ্যে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়া।

তাছাড়া দৃষ্টি ও চরিত্র হেফাজত করা,স্ত্রীকে কাজে সাহায্য করা তাকে রবের ইবাদাতের সুযোগ করে দেওয়া,স্বামী স্ত্রী একে অপরের সাথে সদ্ব্যবহার ও সম্মান সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে।

মাঝে মাঝে স্নেহা ও আবিদের খুনসুটি, রোমান্টিকতা, অভিমান কিংবা চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে রাগ ভাঙ্গানো,,সব মিলিয়ে বইটিকে করেছে অসাধারণ প্রাণবন্ত।

আমার মন ধাঁধানো দুটি চরণ:-

এক। পবিত্রতার মিষ্টি ছোঁয়া তার কপালে চুইয়ে যদি বলতেন,”আমি পাঁচতলা নয়, টিনসেডেই আমার জান্নাতি বাগান ফুলে ফলে ভরতে চাই। নিত্য মাছ গোস্ত নয়, ডাল ভাতে জীবন কাটাতে চাই। কিরণমালা,জামদানি আর নামীদামি ব্যান্ডের কসমেটিক্স নয়, সাদামাটা সুতির কাপড় আর পূর্ণিমার জোৎস্না মেখে তোমার রাণী সাজতে চাই”

দুই। “ভালোবাসা কি?ভালোবাসা হলো পেন্সিল-রাবারের মতো। পেন্সিল ভুল লিখলে রাবার তা মুছে দেয়, কিন্তু একই ভুল পুনঃ পুনঃ লিখতে থাকলে  শেষমেশ খাতাটি কিন্তু ছিঁড়ে যায়”

গল্পটা শুরু হয় স্নেহা আর আদিবের দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি নিয়ে। স্নেহার অভিমান করে গাল ফুলিয়ে থাকা, অভিমান ভাঙাতে আর স্নেহার খুন করা হাসি দেখতে আদিবের ‘বউ’ নামক রচনা লেখা। তার প্রতি-উত্তর হিসেবে অপর পৃষ্ঠায় লেখা স্নেহার ‘জামাই’ নামক রম্য রচনা।

একটা বিষয় খুব মজার, আদিব স্নেহাকে ভালোবেসে ‘কইতর’ (কবুতর) বলে ডাকে। কারণ কবুতর ঠোকর মেরে খায় আর স্নেহা আদিবের হাতে খায়। এভাবেই চলতে থাকে তাদের টক ঝাল মিষ্টি হালাল রোমান্টিকতায় ভরপুর হালাল  সম্পর্কের গল্প।

প্রথমে ভেবেছিলাম গল্পটি বুঝি শুধুই স্নেহা আর আদিব কে নিয়েই লেখা। কিন্তু এখানে হাসান আর মাইশার সম্পর্কটাও দেখানো হয়েছে। একপাশে স্নেহা-আদিবের টইটম্বুর ভালোবাসা, দুষ্টুমি, একে অপরকে বোঝার আকাশসম প্রচেষ্টা, বিশ্বাস ও যত্নে বেড়ে ওঠা এক হেলদি রিলেশন, অপরদিকে হাসান-মাইশার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, একে অন্যকে বোঝতে না পারা, ছোটখাটো বিষয়কে কেন্দ্র করে ডিভোর্স পর্যন্ত গড়ানো।

আবিদ হাসান কে ভালোবাসার নিম্নউক্ত সংজ্ঞা টি দেয়ঃ-

“ভালোবাসা কি?ভালোবাসা হলো পেন্সিল-রাবারের মতো। পেন্সিল ভুল লিখলে রাবার তা মুছে দেয়, কিন্তু একই ভুল পুনঃ পুনঃ লিখতে থাকলে  শেষমেশ খাতাটি কিন্তু ছিঁড়ে যায়”

আর তা থেকে সহজেই বোঝতে পারা যায়, আবিদ স্নেহাকে কতটা বেশি অনুভব করে।

অপর দিকে স্নেহা মাইশাকে নিজের ভুলগুলো বুঝার এবং শোধরানোর জন্য টেকসই কিছু পরামর্শ দিয়ে কয়েক পৃষ্ঠার এক ‘সরস চিঠি’ তুলে দেয় মাইশার হাতে।

আমার মতে এই চিঠিটি সকল বিবাহিত ও অবিবাহিত বোনদের একবার হলেও পড়া উচিত। তাহলে ডিভোর্সের হার আশা করি অনেকটাই কমে যাবে। তবে সেজন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সমভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে তবেই না হবে সুখী দম্পতি।

লাভ ক্যান্ডি বইয়ের বকুলমালা অধ্যায়ে লেখক উক্ত বিষয় নিয়ে খুব সুন্দর কিছু কথা বলেছেন,

“সুখ হলো বিচ্ছিন্ন কিছু অনুভূতির নাম। ছড়িয়ে থাকা বকুল কুড়িয়ে মালা গাঁথার নাম। সেই মালা প্রিয়জনকে নিজ হাতে পরিয়ে দেওয়ার নাম।

এর মাঝে যে ধূলিকণা থাকবে না – এমনটা নয়। জীবন প্রবাহের প্রতিটি পরতে পরতে মিশে আছে ধূলিকণা। এতে সুপ্ত আছে সব বিষাক্ত পয়জন। একটু বেখেয়ালিপনা এই রাজ্য ধ্বংস হওয়ার জন্য যথেষ্ট। একটু অসতর্কতা-ই সুখের সংসার বিষে নীল করার জন্য খুব যথেষ্ট।

উচিত হলো – বকুল গুলো কুড়িয়ে সযত্নে সংগ্রহ করা এবং ধূলিকণা গুলো স্রেফ ঝেড়ে ফেলে বকুলের মালা গাঁথায় মন দেওয়া। আর!আর একান্তে প্রিয়জনের গলায় সেই মালা পরিয়ে দেওয়া….।”

ক্লিনিক্যাল পার্ট লাভ ক্যান্ডি বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়। এই অধ্যায়-ই বইটাকে পূর্ণতা দিয়েছে। এর অন্তর্ভুক্ত পারিবারিক প্রেসক্রিপশন -১ ও ২ এ ডা. রাকিবের অমূল্যবান পরামর্শগুলো ডা. রাকিব ক্যারেকটারটিকে অনেক বেশি মজবুত করেছে। এমনকি তার সাথে তার পরিবারের সম্পর্কটাও একটা দৃষ্টান্ত।

অন্য আরেকটা বিষয় যা না বললেই নয়। অনেকের মতে, বিয়ের পর তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিলে দুজনার মধ্যে ভালোবাসা কমে যায়, জীবন কে উপভোগ করতে পারে না। এই ধারণাটাও এখানে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

আদিব ও স্নেহা বিয়ের পর খুব দ্রুতই বাচ্চা নিয়ে নেয়। তাদের ছেলে মাহির ঠিকই বড় হতে থাকে কিন্তু তাদের দুজনার মধ্যকার ভালোবাসা, কেয়ারিং এ বিন্দুমাত্র কমতি ছিলো না। বরং দেরি করে বাচ্চা নিলে এবং তারজন্য ব্যবহৃত বহুল আলোচিত পিল বা ইমারজেন্সি পিল যে কি পরিমাণ ক্ষতিকারক হতে পারে তা ডা.রাকিবের কথাগুলো থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়।

চীনের মতো বাংলাদেশে কোন লাভ হসপিটাল না থাকলেও আমরা জোর গলায় বলতেই পারি ‘লাভ ক্যান্ডি’ নামক একটি পারিবারিক প্রেসক্রিপশন আছে। যার মাধ্যমে লেখক বিবাহিত, অবিবাহিত সকল কে যে মেসেজ দিতে চেয়েছেন তাতে তিনি শতভাগ সফল বলে আমি মনে করি।

পরিশেষে আমি বলবঃ-
প্রতিটি যুবক-যুবতির হাতে লাভ ক্যান্ডি পৌঁছুক।
প্রতিটি দম্পতি লাভ ক্যান্ডি বুকে ধারণ করুক।

লাভ ক্যান্ডি – পারিবারিক প্রেসক্রিপশন।

লেখক : জাফর বিপি
প্রকাশনা : নিয়ন পাবলিকেশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৬৭
মুদ্রিত মূল্য : ৩০০টাকা

লাভ ক্যান্ডি বই টি থেকে কিনতে পরেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!
Exit mobile version