আমলাতন্ত্র কী? আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী? এবং এর সমালোচনা।
আমলাতন্ত্র একটি সার্বজনীন ধারণা। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই কম বেশি আমলা দ্বারা পরিচালিত। আধুনিক রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা বহুলাংশে আমলাদের উপরই নির্ভরশীল।
“Bureaucracy” শব্দটি যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত একটি শব্দ। আমলাতন্ত্রের যেমনিভাবে ব্যাপক সুনাম রয়েছে তেমনিভাবে এর সমালোচনা রয়েছে অনেক। কখনো কখনো এটি তার নিয়ম পদ্ধতির বাইরে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। আর অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্র গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ।
আমলাতন্ত্রের শাব্দিক অর্থ : আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো— ‘Bureaucracy‘। শব্দটি ফরাসী শব্দ ‘Bureau‘ ও গ্রীক শব্দ ‘Kratein‘ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে ‘Desk Government’ – তাই উৎপত্তিগত অর্থে আমলাতন্ত্র হলো দপ্তর সরকার বা ‘Desk Government.
আমলাতন্ত্র : আধুনিককালে যে কোনো প্রশাসনই আমলানির্ভর। আমলাতন্ত্রের সূত্রপাত হয়েছে সেনাবাহিনীতে। বর্তমানে এটি প্রশাসনের একটি অপরিহার্য সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমলাতন্ত্রের জনক যদিও ম্যাক্স ওয়েবারকে বলা হয়, পরবর্তীতে বিভিন্ন দার্শনিক এর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : সাধারণত আমলাতন্ত্র বলতে আমলাদের কর্তৃত পরিচালিত শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায় । সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য যে কর্তৃক ব্যবস্থা মানবশক্তি, কার্যালয় ও বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেন, তারই সমষ্টিকে আমলাতন্ত্র বলা হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে আমলাতন্ত্রের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
অধ্যাপক ফাইনার এর মতে, The civil service is body of officials permanent paid and skilled. অর্থাৎ আমলাতন্ত্র একটি স্থায়ী বেতনভুক্ত এবং দক্ষ চাকরিজীবী শ্রেণি।
Paul H. Apleby এর ভাষায়, আমলাতন্ত্র বলতে অসংখ্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে ও জটিল শর্তে সুশৃঙ্খলভাবে পরস্পর একত্রিত হওয়াকে বুঝায়।
আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্রীয় শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমলাতন্ত্র গণতন্ত্রের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। গণতন্ত্রে আমলাতন্ত্র বহুবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। তবে আমলাতন্ত্র যে সর্বদা নন্দিত তা কিন্তু নয়। আমলাতন্ত্রে কতিপয় ত্রুটি বিদ্যমান। বিরুদ্ধবাদীরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এর সমালোচনা করেছেন। যা আমলাতন্ত্রকে সীমিত করেছে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা :
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা ও কার্যাবলি নিম্নরূপ-:
১। নীতি নির্ধারণ : রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র নীতি নির্ধারণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২। আইন প্রণয়ন : আইন প্রণয়ন করা আমলাতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আমলারা আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আইন প্রণয়নের জন্য যে সকল কলাকৌশল, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা প্রয়োজন তা অনেক সময় আইনসভার সদস্যগণের মাঝে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আমলারা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের উপর আইন প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পিত হয়। এক্ষেত্রে তাদের রচিত আইনকে Delegated Legalslation বলে ।
৩। বিচার : বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আমলারা বিচার সংক্রান্ত কাজ করে। বর্তমানে আমলারা কিছু কিছু বিরোধের সমাধান করে থাকে। তারা আদালতের পরিবর্তে নিজেরাই কিছু কিছু বিবাদ-বিসম্বাধের মীমাংসায় অংশ নেয়।
Alomond Dowel-এর ভাষায়, বিভাগীয় ন্যায়-বিচার ও বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল সম্প্রসারণের ফলে আমলাতন্ত্রে কিছু কিছু বিচার সংক্রান্ত কার্য সম্পাদিত হয়।
৪। সরকারি নীতির বাস্তবায়ন : আমলাতন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো সরকারি নীতির বাস্তবায়ন। আমলারা শুধু আইন প্রণয়ন করে না, আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে। আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে সরকারি নীতি ও বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়।
৫। প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা রক্ষা প্রশাসনিক : ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আমলাতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বদায়িত্ব। নিরবচ্ছিন্ন শাসনকার্য ছাড়া প্রশাসনিক গতিশীলতা আসে না। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তিত হয়। কিন্তু আমলাশক্তির কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তারা প্রশাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে।
৬। দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা: আমলাতন্ত্রের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হলো দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা করা। গণতন্ত্রে আমলারা দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা করে থাকে। আমলাদের দৈনিক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামাজিক নিরাপত্তা, পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থা, সংস্থাপন, কর ও জনকল্যাণ সংক্রান্ত কাজ। দৈনন্দিন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রশাসন গতিশীলতা লাভ করে।
৭। পরামর্শদান : আমলাতন্ত্র পরামর্শ সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি আমলাদের একটি উপদেষ্টামূলক কাজ। মন্ত্রীরা অনেক বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে পারেন না। এক্ষেত্রে আমলাগণ তাদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন।
৮। সামাজিক পরিবর্তন : সামাজিক পরিবর্তন গণতন্ত্রের একটি বিশেষ দিক। গণতন্ত্র সদা পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে গণতন্ত্র সমুন্নত ও শক্তিশালী হয়। এক্ষেত্রে সামাজিক পরিবর্তন বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৯। স্বার্থের মূল্যায়ন : আমলাতন্ত্র বিভিন্ন প্রতিযোগিতাশীল মূল স্বার্থের মূল্যায়নে ভূমিকা রাখে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে জনস্বার্থের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন করে। সংশ্লিষ্ট বিষয় জনস্বার্থে কতটুকু সম্পৃক্ত তা আমলারা যাচাই করে। এক্ষেত্রে গোষ্ঠী স্বার্থের চেয়ে জনস্বার্থ বেশি প্রাধান্য পায়।
১০। তথ্য সরবরাহ : তথ্য সরবরাহে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমলারা বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। জনসাধারণ, বিভিন্ন গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সরকারের প্রয়োজন হয়। আমলারা সেসব ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
১১। ভারসাম্য রক্ষা : আমলাতন্ত্রের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ভারসাম্য রক্ষা করা। আমলারা পেশাগত ও নৈতিক মূল্যবোধের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। এছাড়া গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থে সমন্বয় সাধন করে। যার মাধ্যমে প্রশাসনিক ভারসাম্য তৈরি হয়।
১২। রাজনৈতিক স্থায়িত্ব : আমলারা রাজনৈতিক স্থায়িত্বে ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। বিশেষত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এক্ষেত্রে আমলারা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
১৩। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা : রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা আমলাতন্ত্রের একটি বিশেষ কাজ। আমলাতন্ত্র কখনো কখনো রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে । এটি তাদের একটি আনুষ্ঠানিক কাজ ।
আমলাতন্ত্র এর সমালোচনা :
আমলাতন্ত্র সব সময় স্বচ্ছ তা কখনো নয়। আমলাতন্ত্রে নানা ত্রুটি বিদ্যমান। নিম্নে আমলাতন্ত্রের সমালোচনা তুলে ধরা হলো :
১। লালফিতার দৌরাত্ম্য :
আমলাতন্ত্রের অন্যতম ত্রুটি হচ্ছে লালফিতার দৌরাত্ম্য। লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে মূলত পূর্বের নীতিকে অনুসরণ বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা বুঝায়। তবে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে পূর্বের নজির বা নীতিকে অনুসরণ একেবারে খারাপ নয়। কে. বি. স্মেলক এর মতে, যথাযথভাবে ব্যবহৃত লালফিতার আইনের সামনে সকল নাগরিকের সমানাধিকার প্রতীক হতে পারে। তবে পূর্ব নজিরকে হুবহু অনুসরণ করা ঠিক নয়। কারণ এর মাধ্যমে সততার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় এবং বিষয়টির ফয়সালা তার গুণাগুণের ভিত্তিতে হয় না। বরং এটি মান্ধাতা আমলের পুরনো নজির অনুসারে সম্পাদিত হয়।
২। ক্ষমতার লিপ্সা :
আমলাতন্ত্রের অন্যতম ত্রুটি হচ্ছে ক্ষমতার লিপ্সা। এটি আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ। আমলারা দায়িত্বে বসার পর থেকে তাদের ক্ষমতা, পদমর্যাদা, কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালান। তারা আইনসভা ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা গ্রহণে সচেষ্ট থাকেন। তারা ক্ষমতা হস্তান্তর নীতিতে খুব একটা আগ্রহী নয়, কারণ এর মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাদের ক্ষমতার মোহ জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে।
৩। দায়িত্বহীনতা :
দায়িত্বহীনতা আমলাতন্ত্রের বিশেষ সমালোচনা। এটি আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি। আমলাগণ রাষ্ট্রের স্থায়ী কর্মচারী। যে কোনো কাজের জন্য সরাসরি জনগণের কাছে দায়ী থাকে না। কাজের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হয় মন্ত্রীগণকে। যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা জনগণের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ না থাকায় নিজেদের খেয়াল খুশিমত কাজ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
৪। উদাসীনতা :
উদাসীনতা আমলাতন্ত্রের অন্যতম একটি সমালোচনা। আমলারা তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। তারা নিজেদেরকে একটি এলিট শ্রেণি বলে দাবি করেন। তারা নিজেদেরকে উচ্চ শিক্ষিত বলে দাবি করেন। তারা সময় সময় নিজেদের ইচ্ছামত নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে চায়। যার কারণে অনেক সময় জনগণের স্বার্থের প্রতি উদাসীন থাকেন।
৫। বিভাগীকরণ :
আমলাতন্ত্রের বিশেষ ত্রুটি হচ্ছে বিভাগীকরণ। বিভাগীকরণ আমলাতান্ত্রিক সরকারের কাজকর্ম বিভাজিত করে কতিপয় পৃথক ও স্বতন্ত্র বিভাগ সৃষ্টি করে। E. N. Giadden বলেন, আমলারা তাদের সংগঠনের কর্মপরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তোলার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন। প্রত্যেক দফতর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ সকল বিভাগীকরণের কারণে সরকারি কার্যক্রম বিভাগভিত্তিক হয়ে পড়ে। এর ফলে প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংগঠনের কর্মের প্রতি লক্ষ্য না রেখে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টায় থাকেন, যার ফলশ্রুতিতে কর্মচারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়ে তোলেন ।
৬। নীতি নির্ধারণে হস্তক্ষেপ :
বর্তমানে আমলারা নির্বাহী ও আইন বিভাগের কাছ থেকে অনেক বেশি নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা ভোগ করেন। বর্তমানে সরকারের কার্যাবলি বৃদ্ধির সাথে সাথে রাজনীতি ও প্রশাসনের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। আমলারা এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে। রাজনীতিবিদদের প্রশাসনিক অজ্ঞতার কারণে নীতিনির্ধারণে আমলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭। হৃদয়হীন আমলাতন্ত্র :
আমলারা একই পদ্ধতিতে | নি নিয়মমাফিক কাজ করতে করতে এমন একটি মানসিকতা গড়ে জ তোলে যে, তারা একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। তারা ব্য মানুষের মনমানসিকতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না। একটি মানুষ আ কি চায়, কিভাবে তাকে কোনো একটি কাজে সহযোগিতা করা যায়, সেদিকে না তাকিয়ে নিজেদের মত ও পথকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যার কারণে আমলাদেরকে রোবটের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
৮। আমলাতন্ত্র’র দীর্ঘসূত্রিতা :
দীর্ঘসূত্রিতা আমলাতন্ত্রের আরেকটি বড় ত্রুটি। সব কিছু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা তাদের চিরাচরিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কোনো বিষয় যতই জরুরী হোক না কেন সমস্ত সিঁড়িপত্র স্তর ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কাজটি সম্পন্ন করে। ডব্লিউ বেজহাট তাঁর বিখ্যাত The English Constitution গ্রন্থে লিখেন, আমলাতন্ত্রের অপরিহার্য ত্রুটি এই যে, আমলারা ফলাফলের চেয়ে রুটিন মতো কাজ হলো কি-না তা নিয়ে মাথা ঘামাবে বেশি।
৯। আলাদা শ্রেণি :
আমলারা নিজেদেরকে অনেক সময় সমাজের আলাদা শ্রেণি হিসেবে মনে করে। তারা নিজেদের ব্যাপারে যা-তা কল্পনা করে। তারা মনে করে তাদের মানসম্মান সমাজের অন্যান্যদের চেয়ে অনেক উঁচু।
১০। আমলাতন্ত্র’র দুর্নীতি :
আমলাতন্ত্রের সমালোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু হচ্ছে দুর্নীতি। এটি আমলাতন্ত্রের নেতিবাচক দিক। তারা অসদুপায় অবলম্বনের উদ্দেশ্যে বছরের পর বছর বিভিন্ন ফাইলবন্দি করে রাখে। কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য তারা কখনো কখনো উৎকোচ দাবি করে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের ক্ষেত্রে এ ত্রুটি বেশি দেখা যায় ।
১১। জনকল্যাণের পরিপন্থী :
জনকল্যাণের পরিপন্থী। আমলারা নিজেদেরকে জনগণ থেকে | আমলাতন্ত্র অনেকটা পৃথক করে রাখার চেষ্টা করে। জনকল্যাণ ও দ্রুত অর্থনৈতিক | উন্নয়নের বিষয়ে তারা তেমন চিন্তা করেন না। যার কারণে জনকল্যাণ ব্যাহত হয়।
পরিশেষে
বলা যায় যে, আমলারা আমলাতন্ত্র উন্মাসিকতা, আত্মশ্লাঘা বিধি-বিধান ও রুটিন কাজের স্থবিরতা, কাজ কর্মের মানবিক দিক উপেক্ষা, সংকীর্ণ গণ্ডিবদ্ধ মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গির রক্ষণশীলতা প্রভৃতি ত্রুটিগ্রস্ত। আর এসব আমলাতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমলাতন্ত্রের এ ত্রুটিসমূহ গণতন্ত্রকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। এর থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে।