Home পড়া-শুনা নতুন শিক্ষাক্রম ও নতুন শিক্ষা কারিকুলাম – বদলে যাওয়া দেশের জাতীয় শিক্ষা...

নতুন শিক্ষাক্রম ও নতুন শিক্ষা কারিকুলাম – বদলে যাওয়া দেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা

0

নতুন শিক্ষাক্রম এ এক নতুন শিক্ষা কারিকুলাম – বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম তথা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা।

শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে আমূল পরিবর্তন আনছে সরকার। প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB)। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখা অনুমোদন করেন।

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম –

★ এসএসসি পর্যন্ত কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই
★ এইচএসসিতে বোর্ড পরীক্ষার পরিবর্তে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা।
★ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে না কোনো পরীক্ষা
★ ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন।
★ একাদশের আগে কোনো বিভাগ থাকবে না।
★ ষষ্ঠ-দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে।
★ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (PEC) এবং স্কুল সার্টিফিকেট (JSC) পরীক্ষা থাকবে না।

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম – বিস্তারিত

এবার চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। সময় না বাড়িয়ে শুরু করছি।

নতুন শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য

নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের মূল লক্ষ্য পড়াশোনাকে আনন্দময় করে তোলা। একই সাথে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমানো। শ্রেণিকক্ষেই তাদের বেশির ভাগ পাঠগ্রহণ শেষ করা নিশ্চিত করা, অর্থাৎ পুরো শিক্ষাক্রম হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক।

নেই কোন বিভাগ বিভাজন

নতুন শিক্ষাক্রমে অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন থাকছে না। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষাও নেয়া হবে না। দশম শ্রেণির পর এসএসসি নামে পাবলিক পরীক্ষা হবে, তা হবে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে।

অভিন্ন ১০ বিষয়

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। সেগুলো হলো— বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম শিক্ষা, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এরপর একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম এর মূল্যায়ন পদ্ধতি

শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষা থাকবে না। এসব শ্রেণিতে শতভাগ মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন ধারাবাহিকতার ওপর। ধারিবাহিক শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ, মূল্যায়ন হবে। বাকি ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন কার্যক্রমের ভিত্তিতে এই দুই শ্রেণির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ের পুরোটাই মূল্যায়ন হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, 5 বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। এর বাইরে আরও পাঁচটি বিষয়ের শতভাগ মূল্যায়ন হবে ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে।

বিষয়গুলো—জীবন ও জীবিকা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। নবম ও দশম শ্রেণিতেও এই পাঁচটি বিষয়ে একইভাবে মূল্যায়ন হবে। এর বাইরে এই দুই শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নে বেশি জোর দেয়া হবে। এই দুই শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে এবং বাকি ৩০ শতাংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন।

সালভিত্তিক নতুন কারিকুলাম

২০২২ : প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং কার্যক্রম। তার মধ্যে কারিগরি ও মাদরাসাকে যুক্ত করা হবে।
২০২৩ : প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি।
২০২৪ : প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণি।
২০২৫ : প্রাথমিকের পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণি।
২০২৬ : একাদশ শ্রেণি।
২০২৭ : সর্বশেষ দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন কারিকুলাম।

সাপ্তাহিক ছুটি

প্রাথমিকে সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন এবং মাধ্যমিক স্তরে দুই দিন ছুটি থাকবে। তবে জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে এবং এসব দিবস পালন শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষ করার পর এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হবে না। একাদশ শ্রেণিতে বছর শেষে একটি ও দ্বাদশে আরেকটি পরীক্ষা নেয়া হবে। এ দু’টিই হবে পাবলিক পরীক্ষা । দুই পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হবে।

কমেন্ট করতে ভুলবেন না। অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। ই-মেইল বা ফেসবুক এ। আপনার প্রতি অশেষ ভালবাসা।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!
Exit mobile version