Home পড়া-শুনা অনার্স পরিবেশ কি? পরিবেশ দূষণের কারণ ও প্রতিকার ।

পরিবেশ কি? পরিবেশ দূষণের কারণ ও প্রতিকার ।

0
পরিবেশ কি পরিবেশ দূষণের কারণ ও প্রতিকার

পরিবেশ দূষণ কি? পরিবেশ দূষণের সংজ্ঞা দাও।

সাধারণত পরিবেশ দূষণ বলতে আমরা মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর দ্বারা পরিবেশের অবক্ষয় সাধনকে বুঝিয়ে থাকি। অর্থাৎ পরিবেশ দূষণ বলতে সম্পূর্ণভাবে মানুষের কার্যাবলির মাধ্যম স্থানীয় পরিসীমায় সংঘটিত পরিবেশের অবক্ষয়কে বুঝানো হয়ে থাকে। ব্যাপক অর্থে পরিবেশ দূষণ হলো মানুষের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও কার্যাবলির দ্বারা পরিবেশের গুণগত মানের হ্রাস।

পরিবেশ দূষণের কারণগুলো কি কি?

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত সমস্যাটি একটি মারাত্মক সমস্যা। একটু লক্ষ করলেই আমরা দেখতে পাই নিজেদের অবহেলার কারণেই প্রতিদিন আমরা চারপাশে তৈরি করছি বিষাক্ত পরিমণ্ডল এবং নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছি এক নিঃশব্দ বিষক্রিয়ার মধ্যে। কাজেই পরিবেশ দূষণের নিয়ামকগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে তা নির্মূল করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

পরিবেশ দূষণের প্রধান কারন সমূহ :

বিষাক্ত বাতাস :

দেশের জনসংখ্যা যেভাবে দিন দিন বেড়ে মহে ঠিক তেমনিভাবে বাড়তি লোকের চাহিদা মেটানোর জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে যানবাহন এবং তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কলকারখানা।। এসব গাড়ি ও কলকারখানা থেকে নির্গত ধোয়া বাতাসকে করে। হে বিষাক্ত যা পরিবেশকে দ্রুত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

পলিথিন :

আশির দশকের গোড়ার দিকে এই বিপদজনক গুহাটি প্রথম এদেশে যাত্রা শুরু করে। বর্জ্য হিসেবে পলিথিন এ সভ্যতার এক ভয়াবহ শত্রু। বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সাবধান বদী থাকা সত্ত্বেও পলিথিন সামগ্রিক ব্যবহার এদেশে বেড়েছে আশস্কাজনকভাবে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ।

প্লাস্টিক সামগ্রী :

এদেশে পলিথিনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্লাস্টিক সামগ্রিক ব্যবহার। প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্যে বাজার এখন সয়লাব। মাটির জন্য এ প্লাস্টিক মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি মাটির জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে।

বন উজার:

যেকোনো দেশেরই পরিবেশের স্বাভাবিক অবসম্য রক্ষা করার জন্য মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৯ শতাংশেরও কম। বনভূমির উজার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ।

পানিতে আর্সেনিক : 

দেশের অনেক অঞ্চলেই খাবার পানিতে আর্সেনিকের মতো মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ তথ্যটি যেকোনো নাগরিকের জন্য উদ্বেগজনক বিষয়।

শব্দ দূষণ :

শব্দ দূষণ বর্তমান সময়ে একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা এখন বাস করছি হাইড্রোলিক হর্ন নামে কে ভয়ঙ্কর শত্রুর সঙ্গে। যার উৎকট আওয়াজ একটু একটু করে চাপ বাড়াচ্ছে আমাদের কানের পর্দার উপর এবং ক্ষয় করে দিচ্ছে আমাদের শ্রবণ ক্ষমতাকে।

পানি দূষণ : 

দেশে পানি দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে। ক্ষতিকর শিল্পবর্জ্যের কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, রূপসা প্রভৃতি নদীর পানি ইতিমধ্যেই মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এসব নদীর পানি সব ধরনের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

অবশেষে :

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের এই হূর্ত থেকে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে। তা না হলে অচিরেই আমাদের জীবন ও পরিবেশ উভয়ই মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

পরিবেশ দূষণরোধ বা প্রতিকারে করণীয়গুলো।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যাগুলোর | একটি হলো পরিবেশ দূষণ। এ ভয়াবহ রকমের পরিবেশ দূষণের। ফলে আজ আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। তাই অতিদ্রুত সময়ে পরিবেশ দূষণের প্রধান নিয়ামকগুলোকে চিহ্নিত করে তা রোধের ব্যবস্থা করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জীবন ও পরিবেশ উভয়কেই মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।

পরিবেশ দূষণরোধে করণীয় :

 জীবন ও পরিবেশকে এখনি বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

বনায়ন :

পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ও দূষণ বন্ধ করতে হলে বনায়নের উপর প্রথম গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। গাছপালা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন নির্গমনের মাধ্যমে পরিবেশকে নির্মল ও সুন্দর রাখে। তাই পরিবেশ দূষণ রোধের জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

শব্দ দূষণ রোধ :

হাইড্রোলিক হর্ণ এবং যততত্র মাইক বাজানোর বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শব্দ দূষণের কবল থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে হয়। হাইড্রোলিক হর্ণের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এরশাদ সরকারের আমলে আইন প্রণয়ন করা হলেও বর্তমানে তা কাগজে বাঘ হয়ে খাচ্ছে। সুতরাং বর্তমান সরকারের উচিত জাতীয় স্বার্থে শব্দ দূষণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

পলিথিন বর্জন :

পলিথিনের ব্যবহার পরিহার করা পরিবেশ | রক্ষার স্বার্থে দেশের প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। নব্বই সালের গোড়ার দিকে দেশে দেশে পলিথিন উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে তৎকালীন সরকার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু রাজনৈতিক জটিলতা এবং ভোট নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় সিদ্ধান্তটির মৃত্যু ঘটে।

পানি দূষণ রোধ :

পরিবেশ সমস্যার সমাধান তথা জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পানি দূষণ সমস্যার সমাধান অতীব জরুরি। পানি দূষণ রোধ করে পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজন নদীর আশপাশে গড়ে উঠা শিল্পকারখানা অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে।

প্রাকৃতিক সার ব্যবহার : 

রাসায়নিক সারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে আমাদের পরিবেশের উপর যে প্রভাব পড়ছে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক সারের ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। | প্রাকৃতিক সার একদিকে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে অন্যদিকে তা পরিবেশের জন্যও ভালো।

সচেতনতা বৃদ্ধি : 

পরিবেশ বিপর্যয়ের সমস্যা সামগ্রিকভাবে একটি দেশের জাতীয় সমস্যা। কাজেই এ সমস্যা থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ আইন। যথেষ্ট নয়। এজন্য দরকার দেশের সমগ্র জনগণের চেতনাবোধ। দেশের জনগণ যদি পরিবেশ দূষণের নিয়ামকগুলো সম্পর্কে | সচেতন হয় তা হলে পরিবেশ দূষণের কবল থেকে আমরা অতি সহজেই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারি।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি, পরিবেশ দূষণের মতো নিঃশব্দ শত্রুর হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে হলে আমাদের এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। তাই বর্তমান সরকারের উচিত রাজনৈতিক দক্ষতা সকলের ম্যান্ডেট ও সমন্বিত প্রশাসনিক পদক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ দূষণের মরণ ছোবল থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর স্বদেশ ভূমি নিশ্চিত করা।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!
Exit mobile version