Home পড়া-শুনা অনার্স বাংলাদেশে তথা উন্নয়নশীল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার এবং...

বাংলাদেশে তথা উন্নয়নশীল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার এবং উপায়সমূহ

2

বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
অথবা,
উন্নয়নশীল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার উপায়সমূহ লিখ ।
অথবা,
বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজ পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর।

সুশাসন বা Good Governance হচ্ছে বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে একটি ব্যাপক প্রচলিত ধারণা, যার মাধ্যমে দেশের জনগণ কিভাবে শাসিত হবে, কিভাবে রাষ্ট্র
পরিচালিত হবে, রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক কেমন হবে ইত্যাদি জানা যায়।
আধুনিক সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিরাজমান সকল সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। মূলত রাষ্ট্রকে সু ব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিচালনার মাধ্যমে উৎকর্ষের শীর্ষে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

• বাংলাদেশে তথা উন্নয়নশীল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ :

বাংলাদেশে সহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে।

প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন

ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশরা তাদের স্বার্থান্বেষী প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কোনো আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেনি। ১৯৪৭ পরবর্তীতেও কোনো প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়নি। সামরিক শাসনে রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান, চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এতই দুর্বল ছিল যে, আইয়ুব খান এসব প্রতিষ্ঠানকে নিজ দুর্বল প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই বাংলাদেশে সু-শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন।

গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি

বাংলাদেশে শাসন ব্যবস্থায় আজ পর্যন্ত যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তাদের মধ্যে কর্তৃত্বপরায়ণতা, পিতৃতান্ত্রিকতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও স্বজনপ্রীতি পরিলক্ষিত হয় এবং নেতা ও দলের মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মূল্যবোধের অভাব। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশের সু-শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা পরিহার করে অর্থাৎ নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক চর্চা তথা জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।

জবাবদিহিতা

সুশাসনের পূর্বশর্ত হচ্ছে জবাবদিহিতা। কেননা দেশের সরকার এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতা থাকলে তারা অন্যায় কাজ করতে ভয় পাবে। সহজে দুর্নীতিতে ঝরাবে না। যাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

স্বচ্ছতা

প্রশাসন কিংবা সরকার ব্যাবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কেবল বিলাশীতায় পরিণত হবে। তাই প্রর্তেক বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা পরিহার

বাংলাদেশে শাসন ব্যবস্থায় আজ পর্যন্ত যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তাদের মধ্যে কর্তৃত্বপরায়ণতা, পিতৃতান্ত্রিকতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও স্বজনপ্রীতি পরিলক্ষিত হয় এবং নেতা ও দলের মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মূল্যবোধের অভাব। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা পরিহার করে অর্থাৎ নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক চর্চা তথা জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।

চারিত্রিক দৃঢ়তার বৃদ্ধি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের চারিত্রিক দুর্বলতা অত্যন্ত একটি। নীতির প্রশ্নে অটল থাকা, নিজের বা অন্যের প্রতি প্রদর্শিত আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া, অন্যায় নির্দেশকে অগ্রাহ্য করা, অঙ্গীকার/প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অন্যায় রুখে দাঁড়ানো প্রভৃতি চারিত্রিক সবলতা নেতাদের মাঝে দেখা যায় না। কার্যত এর বিপরীত অবস্থানটিই বিদ্যমান।

দুর্নীতি প্রতিরোধ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের অধিকাংশ দুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও বারোক্ষভাবে জড়িত। দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। কারণ দুর্নীতি সুশাসনের অন্তরায়।

বহিঃশক্তির উপর নির্ভরশীলতা

বিদেশি শক্তি ও সাহায্যদাতা দেশগুলোর উপর নির্ভর করে ক্ষমতা চর্চার চেষ্টা করে। থাকে দেশীয় রাজনৈতিক বিষয়াদিতে বিদেশি প্রভুশক্তির অনধিকার হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেয় নির্দ্বিধায়। যা আমাদের দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। তাই বহিঃশক্তির প্রভাবমুক্ত সু-শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।

স্বজনপ্রীতি পরিহার

বাংলাদেশে শাসন ব্যবস্থায় আজ পর্যন্ত যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তাদের মধ্যে কর্তৃত্বপরায়ণতা, পিতৃতান্ত্রিকতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও স্বজনপ্রীতি পরিলক্ষিত হয় এবং নেতা ও দলের মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মূল্যবোধের অভাব। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা পরিহার করে অর্থাৎ নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক চর্চা তথা জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।

ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ সিন্ডিকেট কঠোরহস্তে দমন

সুশাসন প্রতিষ্ঠার একটি বড় অন্তরায় হচ্ছে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের মধ্যকার আঁতাত। ঋণখেলাপি শ্রেণি এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। প্রতিনিধি নির্বাচনে অর্থের যোগান দিচ্ছে। এসব প্রতিনিধিরা অবশ্যই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আইন ও নীতিমালা তৈরি করে, যা সু-শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, অন্যদিকে এরা মাস্তান পোষে এবং আইন এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ঐকমত্য প্রশ্নে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, যার ফলে আজও সমাধান হয়নি বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দ্বন্দ্ব, স্থানীয় সরকার কাঠামো, পররাষ্ট্র নীতি ইত্যাদি। অতএব, বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে ।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ

মানুষের বাকস্বাধীনতা ও জনগণের সচেতনতার জন্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। কিন্তু ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হয়ে সরকার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে যা সুশাসনের অন্তরায়। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের ত্রুটি কিংবা দুর্নীতি জনগণের সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে স্বাধীনতা দিতে হবে। এটি সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। কারণ গণমাধ্যম দেশের সুশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ভূমিকা পালন করে।

পরিশেষে বলা যায় যে,
সুশাসন একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে সুশাসন নেই বললেই চলে। তাই বাংলাদেশে সু-শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সবার নৈতিক চরিত্রের উন্নতি ও দেশপ্রেম দৃঢ় করতে হবে। তাহলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।


আমাদের সাথেই থাকুন–

facebook.com/sazzathj

facebook.com/sazzathj

2 COMMENTS

  1. আসসালামুআলাইকুম ভাই৷ আপনার উদ্যেগকে সম্মান জানাই৷ আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাএ(৪র্থ বর্ষ)৷ আমাদের সামনে ফাইনাল পরীক্ষা৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের বিভিন্ন টপিকের উপর লিখা দেন৷ এটা আমাদের জন্য হেল্পফুল৷ প্লিজ ভাই, অনুরোধ রইলো৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!
Exit mobile version