Home অনলাইন আয় ই-কমার্স, এক নতুন অধ্যায়ে বাংলাদেশ। ই কমার্স নিয়ে বিস্তারিত।

ই-কমার্স, এক নতুন অধ্যায়ে বাংলাদেশ। ই কমার্স নিয়ে বিস্তারিত।

0

ই-কমার্স নিয়ে আজ আলোচনা করব। সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাহিদার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে, তেমনি পরিবর্তান ঘটছে বাজার চাহিদারও। তাই বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালিত হবার কারণে ই-কমার্সকে ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এজন্যই ই-কমার্সকে বিশ্বগ্রামের অন্যতম সুফল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সূচনা কথাঃ

১৯৭৯ সালে ইংরেজ উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা মাইকেল অলড্রিচ প্রথম অনলাইনে শপিং-এর সফল ডেমো দেখান। ১৯৯০ সালে www এর জনক টিম বার্নাস লি প্রথম ওয়েব ব্রাউজারের সূচনা করেন। এর ফলে ইন্টারনেট জগতে বিপ্লব সূচিত হয়, অনলাইন শপিং নবউদ্যমে যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস শুরু করেন ই-কমার্স সাইট আমাজান ডট কম। ১৯৯৬ সালে ইন্ডিয়াতে শুরু হয় প্রথম ইন্ডিয়ান ইন্ডিয়ামার্ট, যা ছিল একটি B2B কমার্স সাইট। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে চীনের সাইট আলিবাবা গ্রুপ।

শ্রেণিবিভাগ
Electronic commerce-কে সংক্ষেপে বলা হয় ই-কমার্স (E-commerce)। ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য একটি বাণিজ্য ক্ষেত্র, যেখানে ইলেকট্রনিক সিস্টেম (ইন্টারনেট বা অন্য কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক)-এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়/বিক্রয় হয়ে থাকে। সাধারণত ই-কমার্স-এর কাজটি সম্পাদন করা হয় সবার জন্য উন্মুক্ত একটি নেটওয়ার্ক তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ই-কমার্সকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা যায় : যথা— ১. ব্যবসা থেকে ভোক্তা (B2C), ২. ব্যবসা থেকে ব্যবসা (B2B), ৩. ভোক্তা থেকে ব্যবসা (C2B) ও ৪. ভোক্তা থেকে ভোক্তা (C2C)।

বাংলাদেশে ই কমার্সের ইতিহাস

বিশ শতকের শেষ ভাগে উন্নত দেশগুলোতে ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হলেও একুশ শতকে এসে তা উন্নয়নশীল দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম ই-কমার্স শুরু হয় ২০০০ সালে, সাইটটির নাম মুন্সিব্জি ডট কম। ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা শহর থেকে গ্রামেও বিস্তৃত হওয়ায় ই-কমার্সের সম্প্রসারণ হচ্ছে। সারা দেশে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টারে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রায় দশ হাজার উদ্যোক্তা রয়েছে। এদের কেউ কেউ এরই মধ্যে ই-কমার্সের  পরিচালনা শুরু করেছে।

কর্ম কৌশল – কম সময়ে বেশি কাজ।

সাম্প্রতিক অবস্থা

UNCTAD ১৩০টি দেশের ই-কমার্স খাতসমূহ নিয়ে B2C E-commerce Index প্রস্তুত করেছে। সেখানে । ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা একটি দেশের উক্ত খাতের অবস্থান নির্ণয়ের প্রধান সূচক হিসেবে ধরা হয়। kaymu.com.bd প্রকাশিত ‘A Report on e-Commerce Trends in Bangladesh’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে উক্ত খাত দ্রুতই উন্নতি করছে। kaymu-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, এই খাতে লেনদেন প্রতিবছর কমপক্ষে ১০% বৃদ্ধি পাবে।

সম্ভাবনা
ই-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন একটি নাম। ই-কমার্স তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সরাসরি ম সম্পৃক্ত। ই-কমার্সের সুবিধা হলো এখানে পুঁজি লাগে কম। ইচ্ছাশক্তি, সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমই ই-কমার্স ব্যবসার সবচেয়ে বড় পুঁজি। সারা বিশ্বে অনলাইনে কেনাকাটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেট ও মোবাইলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ই-কমার্স দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অন্যান্য যে কোনো খাতের তুলনায় এ খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। করোনার এক বছরে এ খাতের ব্যবসায় ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের নতুন উদ্যোক্তারা এ খাতে আসছে। অন্যদিকে ই-কমার্সকে কেন্দ্র করে আলাদাভাবে গড়ে উঠেছে । সরবরাহ ও পরিশোধ ব্যবস্থা। সার্বিকভাবে ই-কমার্স হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রার নতুন এক মাধ্যম। । দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ মানুষ ই-কমার্সে পণ্য কেনাকাটা করছে। এ খাতে ছোট বড় মিলিয়ে পাঁচ T লাখের মতো উদ্যোক্তা রয়েছে। পাঁচ বছর আগেও যা ছিল এক লাখের কম। দেশে ই-কমার্স খাতের বার্ষিক । আয় এখন ৮,০০০-১০,০০০ কোটি টাকা। পাঁচ বছর । আগেও দেড় হাজার কোটি টাকা ছিল।

কর্মসংস্থানে ই-কমার্স

ই-কমার্সের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ৪০,০০০-৫০,০০০ অর্ডার সরবরাহ হতো। এখন প্রতিদিন দুই লাখের বেশি অর্ডার সরবরাহ হচ্ছে। আমাদের দেশে যদি দুই কোটি মানুষও ইন্টারনেটে পণ্য কেনে তাহলে বছরে ২৫,০০০-৩০,০০০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হবে। আগামী পাঁচ বছরেই তা সম্ভব। সেটি হলে এ খাতে কর্মসংস্থান ৫০ লাখে উন্নীত হয়ে যাবে। মোট জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটির ৬৫% মানুষের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। প্রতি বছর গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭% এবং বর্ধিষ্ণু নগরায়নে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের এ মধ্যবিত্ত শ্রেণিই ই-কমার্স কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি হবে।

প্রতিষ্ঠানসমূহ
বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাপকভাবে অনলাইনে কেনাকাটা শুরু হয়। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ই-কমার্সই হয়ে ওঠে কেনাকাটার অন্যতম মাধ্যম। দেশে ই-কমার্সের বাজারে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট Daraz, Akhoni এবং AjkerDeal। ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের অন্যতম সাইট Rokomari. com। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান Amazan.com ও ইউরোপের আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান QV বাংলাদেশের বাজারে স্বল্প পরিসরে শুরু কাজ করছে। চীনের আরেক বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান Tencent বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী। ই-কমার্সের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়ায় বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো যেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। ১২ আগস্ট ২০২১ বিশ্বের জনপ্রিয় ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজন প্রথমবারের মতো প্রায় ৫৩ লাখ টাকা মূল্যের সংযোজন কর বা ভ্যাট দিয়েছে। মাসিক রিটার্ন হিসেবে সরকারি কোষাগারে এ অর্থ জমা দেয়।

সরকারি নির্দেশনা
৪ জুলাই ২০২১ ই-কমার্স পরিচালনা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এতে করে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম চালু করা হয়। এই নিয়মে এখন সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১-এর ৩.৩.২ অনুযায়ী ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে অনলাইনে পেমেন্টকে অনুমোদন দেয় ২০০৯ সালে। আর ২০১৩ সালে ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।

সুবিধা
ই কমার্সের মাধ্যমে ক্রেতা ঘরে বসেই যে কোনো পছন্দের পণ্য ক্রয় করতে পারে। ফলে ক্রেতাকে কোথাও যাওয়ার পরিশ্রম করতে হয়। না। ই-কমার্সের প্রধান প্রধান সুবিধাগুলো হলো
১। ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য অর্ডার করা যায়।
২। অনলাইনের মাধ্যমেই মূল্য পরিশোধের সুযোগ পাওয়া যায়।
৩। মূল্য পরিশোধের জন্য ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা যায়।
৪। পণ্যের দ্রুত ডেলিভারি পাওয়া যায়।
৫। অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।
৬। সহজেই গ্রাহকদের কাছে পণ্য সেবা পৌঁছানো যায়।
৭। বড় ধরনের কোনো অফিসের প্রয়োজন হয় না।

সমস্যা
১। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের একটি প্রধান সমস্যা এরা জোয়ারে ভাসতে পছন্দ করে। যখন যার জোয়ার আসে তখন তার পিছনেই ছুটে। এর ফলে কিছু অসাধু লোক বিশ্বাসকে পুঁজি করে তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে।
২। সব শ্রেণিপেশার মানুষের আস্থা এখনো অর্জন করতে পারেনি ই-কমার্স । এর অন্যতম কারণ সাম্প্রতিক সময়ের গ্রাহক অভিযোগ। ক্রেতাদের পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও আস্থা রাখতে পারছে না কোনো কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উপর।
৩। ই-কমার্স নিয়ে সবার মধ্যে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এ সুযোগটি নিয়ে হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।শ
৪। ই-কমার্সের উদ্যোক্তাদের নিজস্ব পার্সেল সিস্টেম না থাকায়, পার্সেল কোম্পানির মালিকরা এটাকে সুযোগ হিসেবে নেয়। তথাপি, তাদের কর্মী, অফিস স্পেস ও গুদাম বাড়ায় না। ফলে আম ও লিচুর মতো মৌসুমি ফল প্যাকেটেই নষ্ট হয়ে যায়।
৫। নিরাপদ পরিশোধ ব্যবস্থা না থাকা গ্রাহক অসন্তুষ্টির অন্যতম কারণ। নিরাপদ পরিশোধ ব্যবস্থার জন্য একটি ‘এসক্রো সার্ভিস’ চালু করা হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। এসক্রো সার্ভিস হলো ক্রেতারা আগাম টাকা পরিশোধ করলেও পণ্য সরবরাহ না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। যদিও বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান পরিশোধে মধ্যস্থতা করে থাকে, তাদের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা চাল রয়েছে।

পরিশেষে
তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিশ্বে ই-কমার্সের মাধ্যমেই সবকিছু হাতের নাগালে পাওয়া যায়। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয় যেদিন আমাদের যেকোনো পণ্য ও ই-কমার্সের কল্যাণে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের ক্রেতাই ঘরে বসে অর্ডার দিতে পারবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই পণ্য পৌঁছে যাবে তার হাতে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পণ্যের বিপণনে ই-কমার্সের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

আমাদের সাইট এ লিখা লিখি করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!
Exit mobile version