এইচএসসি’র পর ক্যারিয়ার ভাবনা।
উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) পরীক্ষা মানে জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পার হওয়া। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত এ মাস তিন চারেকের অবসরটুকুর ব্যাপ্তি অল্প হলেও এর মূল্য অনেক বেশি। নিজের জীবনের উন্নয়নে কিংবা কর্মজীবন, সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে এই সময়টুকুই হতে পারে জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। না জানা বিষয়কে জানতে, অল্প জানা বিষয়ে নিজের দখলদারিত্ব আরও পাকাপোক্ত করতে এই অবসরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কোর্স করতে পারেন।
শুদ্ধ উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি
শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে জানা মানুষ সবার নজর কাড়ে। সেই সাথে আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি আপনাকে এনে দিতে পারে আলাদা গুরুত্ব। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এসব বিষয়ে শর্ট কোর্স করিয়ে থাকে। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে এই কোর্স করে ফেলতে পারেন।
সংবাদ উপস্থাপনা
সারাদেশের মানুষ এক নামে আপনাকে চিনবে, সেইসাথে হবে ভালো রোজগার— এমনটা চাইলে করে ফেলতে পারেন সংবাদ উপস্থাপনার কোর্স। সংবাদ উপস্থাপনা পেশা হিসেবেও চমৎকার । যেকোনো পেশায় থেকেও পার্ট টাইম পেশা হিসেবে সংবাদ উপস্থাপক হওয়া যায়। অনেক শিক্ষার্থী, ব্যাংকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, সরকারি চাকরজীবী পার্টটাইম পেশা হিসেবে সংবাদ উপস্থাপনা করেন।
টিভি রিপোর্টার
আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলে কাজের ক্ষেত্র দিনদিন বাড়ছে। ব্যক্তির আগ্রহ, যোগ্যতা আর সৃজনশীলতা থাকলে সহজেই এগুলোতে স্থান করে নেওয়া সম্ভব। সাংবাদিকতা বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা না করেও যে-কেউ ভালো প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন এইচএসসি পরীক্ষার পর।
রেডিও জকি
বর্তমানে তারুণ্যের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠেছেন রেডিও জকিরা । অনেক বন্ধুর সাথে যেমন একদিন দেখা বা কথা না হলে খারাপ লাগে, তেমনি পছন্দের কোনো রেডিও জকির অনুষ্ঠান একদিন না শুনলেও মনটা খুঁতখুঁত করে অনেকেরই। এমন জনপ্রিয় একজন রেডিও জকি হয়ে তাই গড়ে তুলতে পারেন আপনার ক্যারিয়ারও। রেডিও জকি হবার একটা ছোট্ট কোর্স বা ওয়ার্কশপ এ ব্যাপারে অনেক কাজে আসবে।
কম্পিউটার কোর্স
কম্পিউটার বর্তমান জীবনে কী পরিমাণ অপরিহার্য জিনিসে রূপান্তরিত হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই একটা ভালো কম্পিউটার কোর্স করে নিতে পারেন এই সময়ে। কেননা এইচএসসি পরীক্ষার পর অবসর থাকা উচিত নয়।
ভিডিও এডিটিং
যত দিন যাচ্ছে ভিডিও কনটেন্টের প্রসার তত বাড়ছে। সেইসাথে বাড়ছে ভিডিও এডিটর পেশার চাহিদা। ভিডিও এডিটিংয়ের কোর্স করে তা শিখে নিয়ে খুব সহজেই রোজগার করা সম্ভব। পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের এটি একটি ভালো মাধ্যম।
কনটেন্ট রাইটিং
অনলাইন বিজনেস যেভাবে বাড়ছে তাতে ভালো কনটেন্ট লিখতে জানলে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। আবার পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ হিসেবেও কনটেন্ট রাইটিং করা সম্ভব। তাই এ বিষয়ে একটা কোর্স হতে পারে সুদূরপ্রসারী সুফলের কারণ ।
ডিজিটাল মার্কেটিং
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ নির্ভরশীল হয়ে উঠছে অনলাইনের প্রতি । সেই সাথে বাড়ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাহিদা। তাই এ বিষয়ে একটা কোর্স হতে পারে ভবিষ্যৎ পেশার জন্য উপকারী । আর নিজে ব্যবসা করার ইচ্ছে থাকলে এ বিষয়ে জানা আবশ্যক।
কুকিং কোর্স/শেফ কোর্স
আন্তর্জাতিক মানের পেশাগুলোর মধ্যে একটি হলো শেফ। এদিকে ভবিষ্যৎ গড়ার ইচ্ছে থাকলে বা হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়তে চাইলে শেফ কোর্স বা কুকিং কোর্স করে ফেলতে পারেন। ঘরে খাবার বানিয়ে অনেকেই ব্যবসা করেন। সেক্ষেত্রেও এ কোর্স কাজে দেবে।
উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ
উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার ইচ্ছে থাকলে এই সময়ে গ্রহণ করতে পারেন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ। এসব প্রশিক্ষণে ব্যবসার শুরু থেকে ব্যবসা চালানো, মূলধন নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। বিশেষ করে অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে এসব কোর্স দারুণ কাজে দেবে।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট
এখনকার পাঁচতারা হোটেল মানেই যেন একটা ছোটখাটো শহর। এসব হোটেল চালাতে গেলে প্রয়োজন পেশাদার কর্মী। কারণ একটি আধুনিক পাঁচতারা হোটেলে বেশকিছু বিভাগ থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, হাউস কিপিং, পাবলিক রিলেশন, মার্কেটিং, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, হোটেলের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্টসহ সব জায়গায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স করা লোকের কদর বেশি থাকে। তাই ভবিষ্যতের প্রয়োজনে হোটেল ম্যানেজমেন্টের কোর্স করতে পারেন।
ফ্যাশন ডিজাইনিং
ফ্যাশন সচেতন মানুষমাত্রই নিজেকে অন্যের চেয়ে আলাদাভাবে তুলে ধরতে ভালোবাসেন। পোশাক ও অনুষঙ্গে আগ্রহ থাকলে করে ফেলতে পারেন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কোনো শর্ট কোর্স। সেক্ষেত্রে নিজের পোশাক তো বটেই অন্যের কাছ থেকেও কাস্টমাইজ পোশাকের অর্ডার নিয়ে রোজগার করতে পারবেন। পোশাক নিয়ে ব্যবসা করার ইচ্ছা থাকলেও এ কোর্স অনেক কাজে দেবে। এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রেও ফ্যাশন ডিজাইনের রয়েছে অনেক সুযোগ। ফ্যাশন ডিজাইনারদের জন্য গার্মেন্টস, বায়িং হাউজ, বুটিক হাউজ ইত্যাদিতে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং
অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জার প্রতি দিনে দিনে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। নিজেরা বাড়ি না সাজিয়ে অনেকেই প্রফেশনাল ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের শরণাপন্ন হন। এছাড়া অফিস সাজানো বা প্ল্যানিং তো আছেই। তাই করে ফেলতে পারেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের কোর্স। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ হিসেবে সহজেই এখান থেকে রোজগার করা যায় । চাইলে এ পেশাতেই ভবিষ্যৎ গড়তে পারেন।
সুইং-কাটিং
ঘরে বসে রোজগারের জন্য সেলাইয়ের কাজ একটি ভালো মাধ্যম। পড়াশোনার পাশাপাশি যেমন এ কাজ করা যায়, তেমনি পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। কাজ পাবার জন্য বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। প্রতিবেশীরা বা এলাকার মানুষজনই সাধারণত পোশাক তৈরির অর্ডার দিয়ে থাকে। আবার পোশাক নিয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে চাইলে কাটিং-সুইংয়ের কোর্স করা থাকলে বেশ কাজে আসে। এক্ষেত্রে পোশাক তৈরি করে যেমন বিক্রি করতে পারবেন, তেমনি গ্রাহকের চাহিদামাফিক পোশাক তৈরি করে ডেলিভারিও করতে পারবেন।
স্ক্রিন প্রিন্ট
প্রচার ও প্রচারণার এই যুগে স্ক্রিন প্রিন্টে কাজের ক্ষেত্র দিন দিন বাড়ছে। স্ক্রিন প্রিন্টের কোর্স করে নিয়ে যুক্ত হওয়া যায় এই কাজে । টি-শার্ট, মগ, ব্যানার ইত্যাদিতে স্ক্রিন প্রিন্টের কাজ শুরু করা যায় খুব কম মূলধন দিয়েই। স্ক্রিন প্রিন্টকে মূল পেশা হিসেবে যেমন নিতে পারেন, তেমনি পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ হিসেবেও নিতে পারেন।
হস্তশিল্প
হাতে তৈরি জিনিসের সমাদর যুগ যুগ ধরেই রয়েছে। আড়ং বা সোর্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো হস্তশিল্পের জন্যই বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে। এইচএসসি’র পর এই অবসরে করতে পারেন হস্তশিল্প তৈরি করার কোর্স। বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব কোর্স করিয়ে থাকে। অনেক শিল্পী ব্যক্তিগতভাবেও হস্তশিল্প তৈরি করা শিখিয়ে থাকেন। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের এটি একটি ভালো মাধ্যম। এতে নিজে ব্যবসা করার যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি কোনো হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগও রয়েছে।
টাইডাই ও বাটিক
কাপড়ে রঞ্জনশিল্প খুবই প্রাচীন একটি কাজ। সুদূর অতীত থেকেই মানুষ হাতে কাপড়ে রঙ করে আসছে নানান পদ্ধতিতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টাইডাই বা বন্ধনরঞ্জন এবং বাটিক । টাইডাই পদ্ধতিতে কাপড় বেঁধে রঙে চুবিয়ে পুরো কাপড় রঙ করা হয়। এতে বাঁধা জায়গাগুলোতে নকশা তৈরি হয়। আর বাটিক পদ্ধতিতে কাপড় প্রিন্ট করতে ব্যবহার করা হয় মোম। এই দুটি পদ্ধতিই বেশ সহজে শেখা সম্ভব এবং খুব কম ব্যয়ে বেশি লাভ করা সম্ভব। বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন নিয়মিত কোর্স করায় এ দুটি বিষয়ে। আবার ইউটিউবের ভিডিও দেখেও শিখে নিতে পারেন সহজে। কাঁচামাল ও উপাদানও বেশ সহজলভ্য। টাইডাই ও বাটিক হতে পারে আপনার রোজগারের অন্যতম মাধ্যম।
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ
যারা ছবি আঁকতে পছন্দ করেন বা চারুকলায় পড়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য এটা হতে পারে দারুণ পেশা। এতে আঁকার অনুশীলন যেমন হবে, তেমনি হবে রোজগারও । বিভিন্ন প্রকাশনীতে কাজ করতে পারেন প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে। কার্টুন আঁকতে পারেন পত্র-পত্রিকার জন্যও । খুব ভালো ছবি আঁকতে জানলে পোর্ট্রেট এঁকে বা গৃহসজ্জার জন্য ছবি এঁকে বিক্রি করেও আয় করা যায়।
এইচএসসি পরীক্ষার পর ক্যারিয়ার
এছাড়াও শিখতে পারেন সূচিশিল্প ও এমব্রয়ডারি। একসময় সুঁই-সুতোর কাজ নারীদের একচেটিয়া ভাবা হতো, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা নয়। সূচিশিল্প নারী-পুরুষ যে কেউ মেশিন এমব্রয়ডারি শিখে নিলে খুব কম বিনিয়োগে ব্যবসা শুরু করে বাড়িতে বসেই আয় করা সম্ভব।
এইচএসসি পরীক্ষার পর অনেক সময় পাওয়া যায়, তাই অবসরে না থেকে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা শুরু করাই উত্তম।
বাহ্ বাহ্ বাহ্ 💝💝💝💝💝
🤔😮😊☺️