Home বিনোদন খেলাধুলা হাডুডু বা কাবাডি গ্রামীণ বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা।

হাডুডু বা কাবাডি গ্রামীণ বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা।

0

ঐতিহ্য ফেরাতে হাডুডু খেলা ফিরিয়ে আনা জরুরী।

প্রতিটি দেশের একটি জাতীয় খেলা থাকে। ইংরেজদের জাতীয় খেলা ক্রিকেট, আমেরিকানদের জাতীয় খেলা বেস বল। তেমনি হাডুডু আমাদের দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী খেলা। এটি শুধু বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলাই নয়, এটি আমাদের দেশের জাতীয় খেলাও বটে। হালে কাবাডি হিসাবে খেলাটির নামকরণ হলেও গ্রামাঞ্চলে হাডুডু নামেই এটি পরিচিত সর্বমহলে।

হাডুডু বা কাবাডি কেবল আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাই নয় বরং পুরো উপমহাদেশেরই একটি জনপ্রিয় খেলা। বর্তমানে এই খেলাটিকে সাফ গেমসেও যোগ করা হয়েছে। ছোট ছেলে থেকে শুরু করে কিশোররা ও বড়রাও এই খেলা খেলতে পারে।হাডুডু আমাদের জাতীয় খেলা। গ্রামের খেলাগুলোর মধ্যে হা-ডু-ডু, সবচেয়ে জনপ্রিয়। এসব খেলা চলাকালে মানুষের ঢল নামতো।প্রায় বিলুপ্তির পথে জাতীয় এই খেলাকে ঘিরে তৈরি হয় উৎসব মুখর পরিবেশ। নারী পুরুষ ও শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের লোক সম্মিলিত ভাবে এই খেলা উপভোগ করেন। কিন্তু এখন গ্রামের খোলা মাঠে এসব খেলা শুধুই স্মৃতি। দিন দিন এই খেলাটি হারিয়ে যাচ্ছে।

সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঘরে বাইরে ভিডিও গেমের দৌরাত্মে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐহিত্যবাহী খেলাধূলা। শৈশবে যেসব খেলে দিন কাবার করেছেন আজকের বৃদ্ধরা, তারাও এখন ভুলতে বসেছেন সেসব খেলার নাম। একসময় গ্রামের শিশু-কিশোররা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করত। বিকেলে খোলা মাঠে দলবেঁধে খেলাধুলা করত সবাই। শৈশবে দুরন্তপনায় মেতে থাকতো ছেলে-মেয়ের দল। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের পাতা থেকে ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসব খেলাধূলার নাম।

আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখতে হাডুডু খেলাকে ধরে রাখতে হবে।গ্রামীণ খেলা আমাদের আদি সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এসব খেলাধূলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করতো। কিন্তু কালক্রমে এই খেলার কদর হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে গ্রামীণ খেলাগুলো বিলুপ্ত হতে হতে এর অস্তিত্বের শেষ সীমায় দাঁড়িয়েছে। খোদ অজপাড়াগাঁয়েও সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হাডুডু বা কাবাডি খেলার প্রচলন নেই।

গ্রামবাংলার খেলাধূলার মধ্যে যেসব খেলা হারিয়ে গেছে তাদের মধ্যে হা-ডু-ডু, বা কাবাডি, খেলা অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া এসব খেলাধূলা এখন আর তেমন কোথাও চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন শুধুই গল্প। আবার নাম শুনে অনেকেই হাসে।‘শুধু হাডুডু নয়, হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী সকল খেলাই ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

এক সময় এ দেশের ছেলেমেয়েরা গ্রামীণ খেলাকে প্রধান খেলা হিসেবে জানতো। কিন্তু তার জায়গা দখল করেছে লুডো, কেরাম, ক্রিকেট, টিভি, কম্পিউটার। আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে অবশ্যই গ্রামীণ ক্রীড়া ফেডারেশন গঠন করা দরকার। এতে আগামী প্রজন্ম আমাদের এসব খেলাকে জানতে পারবে। ভুলে যাবে না আমাদের শত বছরের নিজস্ব ক্রীড়া ঐতিহ্য।

জনশ্রুতি রয়েছে, একসময় প্রতি বছর বর্ষায় উপজেলার পুটিজানা,কুশমাইল,বালিয়ান, দেওখোলা, ফুলবাড়ীয়া, বাক্তা, রাংগামাটিয়া, এনায়েতপুর, কালাদহ, রাধাকানাই, আছিম পাটুলী এবং ভবানীপুর ইউনিয়নের সর্বত্রই ব্যাপকভাবে বিনোদনের একটি বড় উৎসব ছিল এই হাডুডু খেলাকে ঘিরে। এ উপজেলায় ছিল বাঘা বাঘা সব হাডুডু খেলোয়াড়। তাদের নামডাক ছিল অন্য অঞ্চলেও। তারা এ উপজেলা থেকে আরেক জেলায় ভাড়ায় (খেপ) খেলতে যেতেন অহরহ। এ খেলাটি কেন্দ্র করে বসতো গ্রাম্য মেলাও। কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে ফুলবাড়ীয়াসহ গ্রাম-গঞ্জে খেলাটি দেখা যাচ্ছিল না। কেননা ক্রিকেট ও ফুটবল দখল করে নিয়েছে এ জনপ্রিয় খেলাটির জায়গা। স্থানীয় স্কুলছাত্র জামিল হাডুডু প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি আগে কখনও এই খেলা দেখিনি। বাবা-মায়ের কাছে হা-ডু-ডু খেলার কথা শুনেছি। খেলাটি দেখে আমি খুবই আনন্দ পেয়েছি।

আজকের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট ষোল শতকের দিকে বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। তখন বিলেতের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন ক্রিকেটকে বাঁচাতে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। এ ক্লাবটিই ক্রিকেটকে অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যেকোনো অখ্যাত খেলাও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।বিষেজ্ঞরা জানান, এমসিসির মতই গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে এদেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাছাড়া সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগেও ফিরে আনা সম্ভব এসব খেলার হারানো ঐতিহ্য।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ও গবেষক খোকা রহমান বলেন, ‘চর্চা ও তথাকথিত আধুনিকতার কারণে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধূলা। এজন্য প্রয়োজন সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ। তবেই ফিরে পাওয়া যাবে গ্রামীণ খেলাধূলার হারানো গৌরব।গ্রাম বাংলার আবহমান খেলা হাডুডু। শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় এ খেলার রেশ না থাকলেও, গ্রামে কিন্তু এখনও চলে শারীরিক কসরতের এই খেলা। যাতে এখনও নিদারুণ আনন্দ উপভোগ করেন দর্শকরা।

তবে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও নানা প্রতিবন্ধকতায় অনেকটাই কোণঠাসা এই খেলাটি। কিন্তু প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে,ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় আয়োজিত হাডুডু প্রতিযোগিতার আয়োজন অন্তত তাই প্রমাণ করে। বিগত ১০৪ বছর যাবৎ ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় আয়োজন করে যাচ্ছে হাডুডু’র এমন জমজমাট আসর।ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটিকে স্ব-শরীরে উপভোগ করতে মাঠে হাজির হয়েছিল হাজার হাজার নারী ও পুরুষ। যাদের সকলেরই আকুতি ছিল বেশি-বেশি করে যেন আয়োজন করা হয় জনপ্রিয় এই খেলাটি।

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ফুটবল তারকা আমিনুল ইসলাম খেলাটি সম্পর্কে বলেন, ‘যখন ছোট ছিলাম তখন দেখেছি হাডুডু খেলার জনপ্রিয়তা কতটা ছিল। মানুষ এ খেলা দেখার জন্য পাগল ছিল। এ খেলাটি এক সময় মানুষের প্রাণের খেলা ছিল। এখনও এ খেলাটিকে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নেই। অন্যান্য খেলার পাশাপাশি প্রতিটি এলাকার ক্লাব সংগঠনকে এই খেলাটি বাধ্যতামূলক করা উচিত।’

খেলার নিয়মাবলী
অনেকেই হাডুডু খেলার নিয়ম পর্যন্ত জানে না! আমাদের প্রত্যেকের হাডুডু খেলার নিয়ম জানা উচিত। চলুন জেনে নিই এই খেলা সম্পর্কে।

খেলার নাম :হাডুডু বা কাবাডির উত্পত্তিস্থল ফরিদপুর, আবার কেউ কেউ বলেন ময়মনসিংহে কেউ কেউ বলেন বরিশাল।তবে বাংলাদেশের সর্বত্র এই খেলার প্রচলন আছে।

মাঠঃ মাঠের সাইজ :৪২ ফুট লম্বা ও ২৭ ফুট চওড়া। (বালকদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার চওড়ায় ১০ মিটার হয়)। এবং বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার এবং চওড়ায় ৮ মিটার হয়। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্য রেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুটি লাইন টানা হয় যাকে কোল লাইন বলে।মাঠকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় প্রতিটি ভাগকে কোট বলা হয়। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে লবি বলা হয়।

সদস্যঃ প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের ৭ জন খেলোয়াড় একসাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিন জন খেলোয়াড় পরিব্রর্তন করা যাবে।

সময়ঃ মোট সময় :৪৫ মিনিট (২০ মিনিট + ৫মিনিট + ২০ মিনিট) মাঝের ৫ মিনিট বিরতি।

৫ মিনিট বিরতি সহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হবে। খেলা শেষে যেই দল বেশী পয়েন্ট পাবে সাই দলই জয়ী হবে। দুদলের পয়েন্ট সমান হলে দুঅর্ধে আরও ৫ মিনিট করে খেলা হবে। এরপরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হবে।

পয়েন্টঃ যদি কোন খেলোয়াড় মাঠের বাহিরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা(অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড়কে(একাধিক হতে পারে)স্পর্শ করে এক নিঃশাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে, যাদের কে স্পর্শ করবে সে বা তারা কয় জনই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।

সতর্কতাঃ এক নিঃশাসে স্পষ্ট ভাবে পুণঃপুণঃ কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে “দম নেওয়া” বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে।বিপক্ষ কোর্টে একসাথে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোন আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।

অন্যান্যঃ এই খেলার মজার একটা নিয়ম আছে। সেটা হলো ৮০ কেজি বেশি ওজনের কাউকে এই খেলায় নেওয়া হয় না। এই খেলা পরিচালনা ও বিচারকার্য করে থাকেন একজন রেফারি, দুইজন আম্পায়ার, একজন স্কোরার।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

error: Content is protected !!
Exit mobile version